বাংলা চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় অভিনেতা ‘অনিল চট্টোপাধ্যায়’কে (Anil Chatterjee) আমরা সকলেই কমবেশি জানি। কিন্তু তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছে দিতে যে মানুষটি নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন, তাঁকে আমরা কতজন চিনি? কিংবদন্তির এই সাফল্যের আড়ালে যিনি নীরবে থেকেও সবসময় দৃঢ় ভরসা জুগিয়েছিলেন, তিনি হলেন তাঁর স্ত্রী ‘অনুভা চট্টোপাধ্যায়’ (Anuva Chatterjee)। আলো ঝলমলে পর্দা, করতালি কিংবা খ্যাতির কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি নিজেকে কখনোই নিয়ে আসেননি। বরং সংসারের আড়ালেই নিজের পরিচয়কে লুকিয়ে রেখে গড়ে তুলেছিলেন স্বামীর স্বপ্নপূরণের মজবুত ভিত।
জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও তিনি সাংসারিক জীবনের সব ধর্ম পালন করে গেছেন। প্রসঙ্গত, অনুভা দেবীর সঙ্গে অনিলের সম্পর্কটা ছিল নিছক স্বামী-স্ত্রীর নয়। বরং দুই সঙ্গীর পাশাপাশি হাঁটার পথচলার মতো। সংসারের শুরুর দিনগুলোতে অনটনে কাটলেও তিনি স্বামীকে মোটা মাইনের চাকরি ছাড়ার কথায় বাধা দেননি। উল্টে ভরসা দিয়েছিলেন নিজের গয়না বন্ধক রেখে, শুধু যাতে অনিল নিজের অভিনয় করার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। ঋত্বিক ঘটকের ‘কোমল গান্ধার’ ছবির শুটিং চলাকালীন অনুভা দেবীর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়।
সেই অবস্থাতেও স্বামীকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন কাজ বন্ধ না করার। একদিকে সন্তান জন্মদানের যন্ত্রণা, অন্যদিকে অনিলের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিন— দুটোই একসঙ্গে সামলে নেওয়ার দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সেই ছবির সাফল্যের কথা কারোর অজানা নেই, শুধু প্রশংসার বাইরেই থেকে গেলেন আসল মানুষটি। কিন্তু তিনি যে শুধু সংসারেই আটকে ছিলেন তাও নয়। অনুভা চট্টোপাধ্যায় নিজের পড়াশোনা আর ভালোলাগাকেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন সমানভাবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ করেছিলেন তিনি।
আবার রবীন্দ্রসঙ্গীতে ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গেও তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল, রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন দীর্ঘকাল। এদিকে চলচ্চিত্র জগতের সেই সময়ের অনেক তারকাই অনুভা দেবীর কাছের মানুষ ছিলেন। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় থেকে সুচিত্রা সেন কিংবা সুপ্রিয়া দেবী, সবার সঙ্গেই ছিল তাঁর আন্তরিক সম্পর্ক। একসঙ্গে ভাত মেখে খাওয়া, শুটিংয়ের সময় বন্ধুদের সন্তানের দেখাশোনা করা কিংবা নতুন ছবির প্রিমিয়ারে সৎ সমালোচক হয়ে উঠতেন।
অনুভা দেবী ছিলেন কেবল একজন অভিনেতার স্ত্রী নয়, তিনি ছিলেন শিল্পমহলের নেপথ্যের অচেনা স্তম্ভ। শেষ জীবনে শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাসপাতালেই কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। অনিল বাবু গত হয়েছি প্রায় তিন যুগ আগে হাঁপানিতে। এই বছর ৭ জুলাই সিওপিডি এবং বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তাঁর স্ত্রী। শেষ জীবনে পাশে পেয়েছিলেন তিনি ছেলে– অমিত, অরূপ এবং অর্ণবকে। তাছাড়াও তাদের একমাত্র কন্যা অন্তরাও ছিলেন শেষ জীবনের সঙ্গী।
তিন পুত্রবধূর মধ্যে ছোটজনকে নিজের চোখে মারা যেতে দেখেছেন অনুভা দেবী। সারা জীবনটা যেমন আড়ালেই থেকেছেন, শেষ দিনেও চাননি লোকের ভিড়। কিন্তু প্রতিবেশী, বন্ধু, পরিবার— সবাই তাঁর পাশে ছিলেন বিদায় পর্যন্ত। নিজের হাতে গড়া ভালবাসায় ঘেরা সংসারেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অনুভা দেবী। তাঁর মৃত্যুতে উপস্থিত ছিল না কোনও মিডিয়া। শেষে বলতেই হয় যে, অনিল চট্টোপাধ্যায়ের কিংবদন্তি হয়ে ওঠার কৃতিত্ব যতটা তার, ঠিক ততটাই অনুভা দেবীরও। তাঁর সাহচর্যেই ইতিহাস গড়তে পেরেছিলেন অনিল!
আরও পড়ুনঃ “আমি শুরু করেছিলাম, আজ গোটা ইন্ডাস্ট্রি আমাকেই কপি করছে!” “বাসে-ট্রেনে গ্রামে গেলে আমাকে পাগল বলেছিল, নিজেরা কী করছে এবার!”— দেবের বক্তব্যে টলিউডে নতুন বিতর্ক! মেগাস্টারের কথায় কি প্রসেনজিৎদের উদ্দেশেই ব্যঙ্গ?
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।