টলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা ‘ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়’ (Victor Banerjee) সবসময়ই প্রচারবিমুখ বলে পরিচিত। কাজের বাইরে তিনি ক্রমাগত আলোয় থাকতে, কিংবা সাক্ষাৎকারে অভ্যস্ত নন। কেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চান না তিনি? সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ছবি ‘রক্তবীজ ২’ (Raktabeej 2), ছবি নিয়ে আলোচনায় এই প্রশ্নের জবাবে তিনি একেবারে সোজাসাপ্টা উত্তর দিয়েছেন। তাঁর কথায়, যদি কেউ সাক্ষাৎকার নিতে এসে তাঁর প্রথম ছবির নামই না জানেন, তাহলে সেই আলোচনায় বসে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না, আর কাউকে অসম্মান করতে চান না।
তবে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, এমন অগভীর প্রস্তুতিতে তিনি নিজেকে জড়াতে চান না। প্রসঙ্গত, খ্যাতি ও সাফল্যের ভিড়ে থেকেও তিনি নির্লিপ্ত থাকতে শিখেছেন শৈশব থেকেই। শিলংয়ে ছোট বয়সে গান গেয়ে খ্যাতি পেয়েছিলেন, কিন্তু খ্যাতির দম্ভ তাঁকে ছুঁতে পারেনি। তিনি জানতেন, আজ যে জনপ্রিয়, কাল তার জায়গায় অন্য কেউ আসবে। তাই নিজেকে সবসময় সাধারণ ভেবেই রেখেছেন। সমাজ মাধ্যমকেও তিনি সময় নষ্ট মনে করেন, তাই দূরে থাকেন। নিজের নির্জন পাহাড়ি জীবন, ফুটবল খেলার স্মৃতি, আর কয়েকজন প্রিয় মানুষের সঙ্গেই তাঁর জীবন কাটছে এখন।
পাহাড়ের প্রতি টান ভিক্টরের বহু পুরোনো। ছোটবেলা থেকেই চা-বাগান, শিলংয়ের বোর্ডিং স্কুল, একা থাকার অভ্যাস তাঁর জীবনকে গড়ে তুলেছে নিরিবিলি ছন্দে। এখনও তিনি বেশিরভাগ সময় পাহাড়েই কাটান। শহরে ভিড়ভাট্টা, আলোড়ন তাঁর ভালো লাগে না। তবে দুর্গাপুজোর সময়ে কলকাতায় না থাকলেও, দেহরাদূনের রামকৃষ্ণ মিশনে নিয়মিত যান। সেখানে নিরিবিলি পরিবেশ, সময়মতো অঞ্জলি, আর ভোগ খান। সব মিলিয়ে সেটাই তাঁর কাছে পুজোর আসল আনন্দ। আশ্রম থেকে সংগ্রহ করা ভোগ তিনি প্রতিবছর এক অসুস্থ বন্ধুর জন্য পৌঁছে দেন।
রোজ পাহাড়ি মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণা তাঁকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। একবার রুদ্রপ্রয়াগের কাছে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী ছিলেন তিনি। ভূমিধসে এক পরিবার মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল, নদীর ধারে পাঁচটি চিতা একসঙ্গে জ্বলতে শুরু করল। বৃষ্টির কারণে চিতা নিভে গেলে মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হল নদীর জলে। এই দৃশ্য তাঁর মনে গেঁথে গেছে স্থায়ীভাবে। তিনি মনে করেন, পাহাড়ি মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইলে শুধুমাত্র অর্থ সাহায্য নয়, সেখানে গিয়ে সরাসরি কাজ করতে হবে। তাঁর অভিজ্ঞতা তাঁকে শিখিয়েছে, প্রকৃতির কাছে মানুষ কতটা অসহায়।
আরও পড়ুনঃ “বন্ধু হোক বা শত্রু, যোগ্যতা দরকার…আমার শত্রু হতে গেলে যোগ্যতা লাগবেই!” “কাউকে ছোট করে নিজেকে খুব একটা বড় করা যায় না”— কুণাল ঘোষ প্রসঙ্গে বিস্ফো’রক মন্তব্য, ‘রঘু ডাকাত’ বিতর্কে মুখ খুললেন দেব!
উল্লেখ্য, অভিনেতা হিসেবে বহু সফল ছবিতে কাজ করলেও নিজের অভিনীত কোনও ছবিই দেখা হয়নি তাঁর। ব্যতিক্রম শুধু সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’। ‘দুই পৃথিবী’, ‘লাঠি’, ‘একান্ত আপন’ বা সাম্প্রতিক ‘রক্তবীজ ২’— কোনওটাই তিনি দেখেননি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইচ্ছে করে না। অভিনয়ের অভিজ্ঞতাই তাঁর কাছে যথেষ্ট। কাজ শেষ হয়ে গেলে তিনি নতুন কিছুতে মন দেন, নিজের কৃতিত্ব নিয়ে বসে থাকার প্রয়োজন বোধ করেন না। এই নির্লিপ্ততাই তাঁকে আলাদা করেছে সবার থেকে।