টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পালের নাম উচ্চারণ করলে এখনও মনে পড়ে যায় তাঁর ঝলমলে অভিনয়, একের পর এক হিট ছবি, আর দর্শকের অগাধ ভালোবাসা। কিন্তু পাশাপাশি মনে পড়ে যায় তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিতর্কও। আজ তাঁর জন্মদিন—বেঁচে থাকলে ৬৭ বছরে পা দিতেন তিনি। প্রয়াণের পাঁচ বছর পরেও তাপস পালকে ঘিরে আলোচনার ঝড় থেমে যায়নি। স্ত্রী নন্দিনী পালের স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে এক অজানা তাপস, যিনি রাজনৈতিক জীবনে প্রবল অনুশোচনায় ভুগেছিলেন।
চৌমাহা মঞ্চে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যই যেন রাজনৈতিক অধ্যায়ের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়। একসময় যাঁকে মানুষ হিরো ভেবে ভরসা করেছিলেন, সেই মন্তব্যে হতাশ হয়েছিলেন অনুরাগীরা। নন্দিনী জানান, ওই ঘটনার পর তাপস পাল নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। মানুষের সামনে আসতে সংকোচ বোধ করতেন। ঘরে ফিরে মনখারাপ করে বারবার বলতেন, ক্ষমা চাইলেও সেটা যথেষ্ট নয়। নিজের ভুলের শাস্তিকে তিনি কর্মফলের প্রায়শ্চিত্ত বলেই মেনে নিয়েছিলেন।
চিটফান্ড মামলায় সিবিআই কাস্টডিতে যাওয়ার সময়ও তাপস পাল নন্দিনীকে বলেছিলেন—“এটাই আমার পাপের শাস্তি।” স্ত্রী দাবি করেন, তিনি কোনও অর্থনৈতিক দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন না। সাধারণ মানুষও তা জানতেন। কিন্তু তবুও সেই বিতর্কিত মন্তব্যের বোঝা তাঁকে শেষ দিন পর্যন্ত কুরে কুরে খেয়েছিল। পরিবারের পক্ষ থেকেও আজ অবধি সেই মন্তব্যের অজুহাত দেওয়া হয়নি। নন্দিনীর কথায়—“আমরা আজও লজ্জিত।”
তাপস পাল ছিলেন ভীষণ আবেগপ্রবণ মানুষ। রাজনীতিতে যেটুকু বিচক্ষণতা দরকার, সেটা তাঁর মধ্যে কখনওই ছিল না। মানুষের মুখ দেখে বিশ্বাস করতেন, মন দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন। তাই রাজনীতির কড়া বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেননি। বারবার স্ত্রীকে বলতেন—“জানো, আমি অভিনয় ছাড়া আর কিছুই পারি না। মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি সেটা নই।”
আরও পড়ুনঃ ‘কত টাকা দেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে? সে তো ব্লাউজ কিনতেই চলে যায়! এটা করে কি তুড়ি মেরে বেরিয়ে যাবেন প্রত্যেকবার?’ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা নিয়ে ক’টাক্ষ পাপিয়া অধিকারীর
টলিউডে গল্প বলার ধরন পাল্টে গেছে। সমসাময়িক অনেক তারকাই এখনও অভিনয় করছেন। যদি তাপস পাল বেঁচে থাকতেন, হয়তো তাঁকেও আবার বড়পর্দায় দেখা যেত। কিন্তু রাজনৈতিক বিতর্ক ও মানসিক কষ্টের ভার বইতে গিয়ে তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। তবুও রুপোলি পর্দায় তাঁর উপস্থিতি আজও উজ্জ্বল, সমান জনপ্রিয়। টলিগঞ্জের প্রতিটি কোণেই যেন আজও বেঁচে আছেন তাপস পাল।