“আমি চাই কবীর বিশ্বাস করুক, কাব্য ওর ক্ষতি চাইবে না!” “আমার ভাই বা বোন নেই, কিন্তু অনুভব করতে পেরেছি বিশ্বাস থাকাটা জরুরি”— ‘স্বার্থপর’-এ কোয়েলের কণ্ঠে এক মায়ের আকুতি! ভাইবোনের সংঘর্ষ ঘিরে কোন ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথা বলেন তিনি?

ভাই-বোনের সম্পর্ক নিয়ে সমাজে যেমন বহু আদর্শ গল্প শোনা যায়, তেমনি বাস্তব জীবনে অনেক সম্পর্ক জটিলতায় ভেঙেও পড়ে। বাংলা ছবিতে এমন সম্পর্ক নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না, তাই ‘স্বার্থপর’ (sharthopor) ছবির প্রেক্ষাপটটা আলাদা করে নজর কেড়েছে। এখানে বাবা-মেয়ের বাস্তব জীবনের জুটি রঞ্জিত মল্লিক এবং কোয়েল মল্লিক (Koel Mallick) পর্দায় দাঁড়িয়েছেন সম্পূর্ণ নতুন ধরনের সম্পর্কে– একজন আইনজীবী, আর অন্যজন তাঁর মক্কেল। আইনি লড়াইয়ের আবহে দাঁড়িয়ে ‘ভাই-বোন’ সম্পর্কের টানাপড়েনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গল্পটি।

ছবির কেন্দ্রে নিছক একটা মামলা নয়, রয়েছে এক গভীর মানবিক টানাপড়েনের প্রতিফলনও। কোয়েল মল্লিক বরাবরই তার অভিনয়ে সংযত আবেগ দেখিয়েছেন, তবে এই ছবিতে কিছু দৃশ্য তাঁকে বাস্তবের কষ্টে নিয়ে গিয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। গ্লিসারিনে নয়, বাস্তব অনুভবেই তাঁর চোখে জল এসেছে। যদিও তাঁর নিজের কোনও ভাই বা বোন নেই, তবুও যৌথ পরিবারের বড় হওয়া কোয়েল স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পেরেছেন এই বিচ্ছেদের যন্ত্রণা। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পরিবারের ভাঙন আসলে বিশ্বাসেরও ভাঙন।

এই জায়গা থেকেই একজন মা হিসেবে কোয়েলের চিন্তাভাবনা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাঁর দুই সন্তান কবীর ও কাব্য, যারা একসঙ্গে বড় হচ্ছে। তাদের মধ্যেও যেন বিশ্বাস আর সহানুভূতির বন্ধন গড়ে ওঠে, সেই চেষ্টাই তিনি করতে চান। তিনি চান, ভাই-বোনের মধ্যে এমন বিশ্বাস তৈরি হোক যেখানে তারা জানবে, একের ক্ষতি আরেকজন কখনও চাইতে পারে না। একজন মা হিসেবে তাঁর এই ভাবনা শুধু নিজের পরিবারের জন্য নয়, সমাজের প্রত্যেক ভাই-বোনের সম্পর্কের প্রতিও যেন এক প্রার্থনা। তিনি চান ভাই-বোনের সম্পর্ক যেন চিরকাল পবিত্র থাকে।

উল্লেখ্য, ছবির চরিত্র অপর্ণা, যার ভূমিকায় কোয়েল। তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, নিজের অনুভূতির পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য। এটা আত্মকেন্দ্রিকতা নয়, বরং এক ধরনের আত্মসম্মানবোধের প্রকাশ। সেই জায়গা থেকে ছবিটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করবে যে পরিবারে যখন ভাঙন আসে, সেটা কখনও শুধুই জমি-জায়গার জন্য নয়, বরং অদৃশ্য এক বিশ্বাসের ফাটলের জন্য। আর সেই বিশ্বাসটাই যদি গড়ে ওঠে ছোট থেকে, তাহলে হয়তো এমন লড়াইয়ের দরকারই পড়বে না।

আরও পড়ুনঃ “আমি বরাবরই সোজা-শক্ত শিরদাঁড়ায় দাঁড়িয়ে থেকে বলেছি যে আমি করবো না।” “ইচ্ছা করত মাকে বলি, ভাগ্যিস বলিনি! তাই আজও এই পেশায় আছি”— অকপট সব্যসাচী চৌধুরী! পর্দার আড়ালের কোন সত্যিটা সামনে আনলেন ‘বামাক্ষ্যাপা’?

সবশেষে, কোয়েল মল্লিক চেয়েছেন এই ছবি থেকে দর্শক শুধু একটি গল্প নয়, একটি বোধ নিয়ে ফিরুন। যদি একজন ভাই ছবির শেষে ভাবে, “আমি কখনও আমার বোনের বিরুদ্ধে এমন কিছু করব না”, বা কোনও বোন ভাবে, “আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আইনি লড়াইয়ের জায়গায় যাবে না” তাহলেই এই ছবি তার আসল সার্থকতা পাবে। ‘স্বার্থপর’ শুধু একটা ছবি নয়, এটি এক সামাজিক আয়না, যে দেখাবে সম্পর্কের গভীরতা কোথায় গিয়ে শেষ হয় আর বিশ্বাসের শুরুটা কোথা থেকে হওয়া উচিত।