ছোটপর্দা ও বড় পর্দা থেকে ওটিটি, সর্বত্রই নিজের অভিনয় যোগ্যতায় জায়গা তৈরি করেছিলেন অভিনেত্রী ‘তুলিকা বসু’ (Tulika Basu), অথচ একটা দীর্ঘ সময় ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও কাজই মিলছিল না তাঁর! স্টার জলসার ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’ শেষ হওয়ার পর নাকি বহু জায়গায় যোগাযোগ করেও ফল মেলেনি। সবাই একই কথা বলেছেন, পারিশ্রমিক নাকি তাঁর মতো করে দেওয়া সম্ভব নয়! সেই অনিশ্চয়তার সময়েই অভিনয় থেকে নিজেকে দূরে না রেখে বরং অন্য রকমভাবে ফিরে আসার পরিকল্পনা শুরু করেন অভিনেত্রী। তাই এবার একেবারে যাত্রার মঞ্চে অভিনয় শুরু করেছেন তিনি!
এখন তাঁকে দেখা যাচ্ছে ‘আমার মা আমার নয়’ পালায় মায়ের চরিত্রে। তবে, এই যাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্তটা নিতেই নাকি তৈরি হয়েছিল নতুন সমস্যা। সান বাংলার ‘বৃন্দাবন বিলাসিনী’তে নেতিবাচক চরিত্রে কাজ করছিলেন তিনি, কিন্তু শোনা যায় প্রযোজকেরা আপত্তি তোলেন যে শুটিং ছেড়ে যাত্রা করা যাবে না। তুলিকা যদিও দাবি করেছেন, কাজ শুরুর আগেই নাকি সময়-তারিখ নিয়ে আলোচনা সেরে নিয়েছিলেন তিনি। তবুও শেষমেশ তাঁকে ধারাবাহিক থেকে সরে আসতে হয়। কান্নাভেজা গলায় সেই অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন কয়েকদিন আগেই।
তবে মন ভেঙে পড়লেও সেখানেই থেমে থাকেননি। বরং যাত্রাকে প্রথমবারের মতো উপভোগ করছেন। মঞ্চে পুরোনো অভিজ্ঞতা থাকলেও এই মাধ্যম তাঁর কাছে নতুন, তাই নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করছেন তিনি। তুলিকার কথায়, যাত্রায় শুধু কাজ নয় বরং নিজের অভিনয় চর্চাটাও বজায় থাকছে। দীর্ঘ বিরতির পর এই নতুন পরিসর পাওয়ায় অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছেন অভিনেত্রী। তবে তাঁর কাছে অভিনয় মানে শুধু পেশা নয়, জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর সেই অনুভূতিটাই তিনি তুলে ধরেছেন নিজের কথায়, “আমি অ্যাকশনে বাঁচি আর কাট বললেই মারা যাই।
যাত্রাতে তো আর সেটা হচ্ছে না, তবে মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের নীচে অভিনয়টা করতে পারছি এটাই অনেক। আমি যাত্রাটা চালিয়ে যাবো, তবে আগামীতে চাই আবার ছোটপর্দায় কাজ করতে। আসলে বেশ কিছুদিন ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিটাকে আগের মতো লাগছে না। শুধু কিছু সংখ্যক শিল্পীরাই কম্প্রোমাইজ করে যাচ্ছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাচ্ছে না। আমি চাই যাঁরা ছোটপর্দার কাজ থেকে বড় গাড়ি কেনেন বা বিদেশে ভ্রমণে যান, তারাও যেন একটু কম্প্রোমাইজ করেন। তাহলে আমরা সবাই মিলে ভালোভাবে কাজটা করতে পারব।”
এই কথাগুলোর মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে ইন্ডাস্ট্রির প্রতি তাঁর ক্ষোভ, ক্লান্তি আর হতাশা। শুধু নিজের ভবিষ্যৎ নয়, ছেলের নিয়েও দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন তিনি। তুলিকার ছেলে পড়াশোনা করেছে ক্যামেরার পেছনের কাজে নিয়ে, লেখালেখিও করে সে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা দেখে তাঁর আতঙ্ক আরও বেড়েছে। তুলিকা বলেছেন, এত বছর কাজ করেও যখন তাঁরই এই অবস্থা, তখন ছেলের ভবিষ্যৎ কী হবে তা ভেবে রাতের ঘুম উড়ে যায়। তাঁর ভাষায়, “আমিই এতদিন এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে এই অবস্থা, ওর যে কতটা কি করতে পারবে, ভগবান জানেন।
আরও পড়ুনঃ “মাল্টিপ্লেক্স বাংলা ছবির জন্য উপযুক্ত নয়! সাধারণ বাঙালি দর্শক এত টাকা দিয়ে ঝকঝকে মাল্টিপ্লেক্সে যাওয়া পছন্দ করে না।”— হাঁটি হাঁটি পা পা মুক্তির আগেই বি’স্ফো’রক অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী! বাংলা সিনেমার ব্যর্থতার দায় কার উপর চাপালেন অভিনেতা?
ছেলে আমাকে সান্তনা দেয়, বোঝায় যে এখন সময়টা খারাপ কিন্তু একদিন ভালো হবে আবার। ও তো বোঝে না, কিছু কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয় যেগুলো আমি জানি।” সব মিলিয়ে তুলিকার জীবনের এই অধ্যায়টা যেমন কঠিন, তেমনই নতুন শুরুতে ভরপুর। ধারাবাহিক ছেড়ে যাত্রার মঞ্চে দাঁড়ানোটা সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না, কিন্তু আজ তিনি সেই অভিজ্ঞতা উপভোগ করছেন মন খুলে। সামনেই আবার বড়পর্দায়ও ফিরছেন তিনি ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ ছবিতে। এখন দেখার, ভবিষ্যতে কি তিনি আবার পর্দায় ফিরবেন নাকি খোলা মঞ্চই হবে শেষ ভরসা?






