নিঃসন্দেহে তিনি ‘লেডি সুপারস্টার’! শুধুমাত্র যে অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় (Subhashree Ganguly) তাঁর পরিচয়, এমনটা নয়। কখনও সে মিতুল, কখনও ইন্দুবালা তো কখনও সে রূপা। এই মুহুর্তে সে-ই আবার বিনোদিনী! বড় দিনের বড় ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ (Lawho Gouranger Naam Re) আসছে পর্দায়। এই ছবিকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। ২০১৯ থেকে চর্চায় এই ছবি, হয়েছে নানান চরিত্রের মুখ বদল। কিন্তু পাল্টাননি যিনি, তিনি অভিনেত্রী শুভশ্রী। এই মুহুর্তে শেষ পর্যায়ের প্রচারে ব্যস্ততার তুঙ্গে। তবে, সবার মাঝে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে দর্শকদের উত্তেজনার শেষ নেই।
কারণ, তাঁর সাম্প্রতিক কিছু ছবি দেখলে বোঝা যাবে, তিনি বাণিজ্যিক ধারার বাইরে গিয়েও ব্যতিক্রমী চরিত্রদের কিভাবে প্রাণ দিচ্ছেন। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও সেই কথা স্বীকার করেন, তাই বিনোদিনী চরিত্রে তাকে ছাড়া কাউকেই ভাবতে পারিননি তিনি। শ্রীচৈতন্যদেবকে ঘিরে তৈরি এই ছবির পরিকল্পনা নাকি অনেকদিন ধরেই পরিচালকের মাথায় ঘুরছিল, তবে উপযুক্ত পরিস্থিতি না থাকায়, এগোনো সম্ভব হচ্ছিল না। ছবিটা শুরুই হয়েছিল কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আর সেখান থেকেই গল্পটা ধীরে ধীরে গতি পেয়েছে ঈশ্বরের কৃপায়!
অন্তত শুভশ্রী এবং পরিচালক দুজনেই মনে করেন স্বয়ং ভগবানের লীলা ছাড়া এই ছবিকে দাঁড় করানো সম্ভব ছিল না। এদিন শুভশ্রীর কথায়, তিনি যখন প্রথম এই চরিত্রের বিষয়টি জানতে পারেন, তখন তাঁর জীবনে চলছিল সম্পূর্ণ একটা নতুন অধ্যায়। দ্বিতীয় সন্তানের আগমনের অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন তিনি। শারীরিক পরিবর্তন, মানসিক চাপ, সবকিছুর মধ্যেও চরিত্রটির প্রতি তাঁর টান এতটাই গভীর ছিল যে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে খুব একটা সময় নেননি। তিনি বুঝেছিলেন, অভিনয়ের বাইরের লড়াই আর বিনোদিনীর জীবনযুদ্ধের মধ্যে কোথাও যেন একটি অদৃশ্য মিল রয়েছে।
এই মিলটাই তাঁকে চরিত্রটির ভেতরে নিয়ে যায় আর সেই থেকেই তাঁর প্রস্তুতি আলাদা এক মাত্রা পেতে শুরু করে।প্রসঙ্গত, শুটিং চলাকালীন নাকি শুভশ্রী নিজের জীবন থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়েছিলেন! সেটে থাকাকালীন তিনি নাকি পুরোপুরি চুপচাপ থাকতেন, নিজের সঙ্গে নিজেই কথা বলতেন, যেন চরিত্রটা তাঁর ভেতরেই গড়ে উঠছে। খাবারের অভ্যাস থেকে আচরণ, সবকিছুতেই তিনি একটা শৃঙ্খলা ধরে রেখেছিলেন। অভিনেত্রীর কথায় যতদিন এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন, আমিষ খাবার ছুঁয়েও দেখেননি!
বাড়িতে ফিরে পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতেন, যাতে চরিত্রের বাইরে বেরিয়ে যেতে না হয়। চরিত্রের তীব্রতা নাকি শেষ দিনে এসে ভেঙে দিয়েছিল শুভশ্রীকে! সেদিন নাকি তিনি ঘরে ফিরেই দীর্ঘদিনের জমে থাকা আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন। অভিনয় শেষ হলেও চরিত্রটি তখনও যেন তাঁকে ছাড়ছিল না! শুভশ্রীর ভাষায়, “বাড়ি ফিরেই সৃজিত দাকে ফোন করে খুব কেঁদেছিলাম, বলেছিলাম বিনোদিনীকে আমায় ছেড়ে দিতে হচ্ছে! আমার শরীর থেকে শ্রীচৈতন্য আলাদা হয়ে যাচ্ছে! সেদিন রাজ দেখেছিল আমার অবস্থা।”
আরও পড়ুনঃ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বকাঝকা খেয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরলেন নচিকেতা! ‘অবশেষে খাঁচা ভেঙে…’ বাড়ি ফিরেই বার্তা গায়কের
পরিচালকের কথাতে, তার জন্যও পুরো প্রক্রিয়াটাও সহজ ছিল না। পুরীর মন্দিরে শুটিং করার মতো অসম্ভব লক্ষ্য যেভাবে সম্ভব হয়েছে, তাতে স্বয়ং ভগবান চেয়েছিলেন এই ছবির বিশেষ মুহূর্তে উপস্থিত থাকতে। না হলে হাজার পরিকল্পনাও এটাকে সম্ভব করতে পারত না। তবে তাঁর মতে, ভক্তি মানে কেবল আচার বা রীতিনীতি নয়, মনুষ্যত্ব এবং সত্যের প্রতি আস্থা। ছবিতে এই দৃষ্টিভঙ্গিটাই তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন। সেই সঙ্গে শ্রীচৈতন্যদেবের অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে তিনি নতুন করে ভাবনার দরজা খুলেছেন, উত্তর না দিয়ে প্রশ্নটাই বড় করে রেখেছেন!






