“সোনালী ভীষণ ঘুরতে ভালোবাসত, আর আমি শুধু বলতাম এখন টাকা নেই”—আজও নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন না শঙ্কর চক্রবর্তী! সময় থাকতে স্ত্রীকে সময় দিতে না-পারার গভীর যন্ত্রণা আজও বয়ে বেড়ান অভিনেতা!

আমরা প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে অনেক সময়ই পাশে থাকা মানুষটাকেই সবচেয়ে বেশি অবহেলা করে ফেলি। মনে হয়, সে তো আছেই—কাল সময় দেব, পরশু কথা হবে। কিন্তু হঠাৎ যখন সেই মানুষটা আর থাকে না, তখনই স্মৃতি ভারাক্রান্ত করে তোলে মন। ছোট ছোট না বলা কথাগুলোই সবচেয়ে বেশি কাঁটা হয়ে বিঁধে থাকে হৃদয়ে। ঠিক তেমনই আজ স্ত্রীহারা অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তীর জীবন জুড়ে শুধু স্মৃতি আর শূন্যতা। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও সোনালীর অনুপস্থিতি তাঁকে আজও প্রতিদিন অনুভব করায়, কতটা গভীরভাবে তিনি তাঁর স্ত্রীকে মিস করেন।

২০২২ সালে হঠাৎই স্ত্রী সোনালী চক্রবর্তীর মৃত্যু শঙ্করের জীবনে এক নিঃশব্দ ঝড় এনে দেয়। সংসার বলতে এখন আর কেউ নেই পাশে। মেয়ে থাকলেও কাজের সূত্রে সে বাইরে থাকে। ফলে দিনের শেষে বাড়ি ফিরলে অভিনেতার সঙ্গী শুধুই নীরবতা। স্ত্রী চলে যাওয়ার দুঃখ তাঁকে আজও কাঁদায়, কিন্তু তার থেকেও বড় আক্ষেপ—সময় থাকতে তিনি সোনালীকে সময় দিতে পারেননি। কাজ, শুটিং, ব্যস্ততা—সব কিছুর ভিড়ে নিজের মানুষটাকেই যেন অজান্তে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন।

আক্ষেপের কথা বলতে গিয়ে শঙ্কর জানান, “সোনালী বড্ড ঘুরতে ভালোবাসত, আমি বলতাম—ছাড়ো, টাকা নেই।” এইভাবেই বারবার পিছিয়ে যাওয়া। অথচ ঘুরতে ভালোবাসলেও বাস্তবে খুব একটা ঘোরাই হয়নি তাঁদের। এমনকি সোনালী চলে যাওয়ার ঠিক আগেই পুরী যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু কাজের চাপে সেই ইচ্ছেটুকুও পূরণ হয়নি। আজ সেই অসম্পূর্ণ চাওয়াটাই অভিনেতার মনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়।

উৎপল দত্তের দলে থিয়েটার দিয়ে যাত্রা শুরু, কল শো-তে মাত্র একশো টাকার পারিশ্রমিক, রবীন্দ্রভারতীতে সোনালীর সঙ্গে আলাপ—সেই স্মৃতিগুলো আজ আরও ভারী হয়ে ওঠে। দীর্ঘ কেরিয়ার, থিয়েটার থেকে টেলিভিশন ও সিনেমা—সব সাফল্যের মাঝেও ব্যক্তিগত জীবনের এই শূন্যতা তাঁকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে।

আরও পড়ুনঃ ফের ফিরেছে সাহেব-সুস্মিতা জুটি? এবার ঐতিহাসিক চরিত্রে একসঙ্গে ফিরছেন নায়ক-নায়িকা! কোন চ্যানেলের কোন ধারাবাহিকে?

শঙ্কর চক্রবর্তীর জীবনে এখন সবই আছে—নাম, কাজ, অভিজ্ঞতা। তবু নেই সেই মানুষটি, যাঁর জন্য সবকিছুর অর্থ ছিল আলাদা। প্রতিদিনের ছোট ছোট স্মৃতি, না বলা কথাগুলোই আজ তাঁর নিত্যসঙ্গী। এই আক্ষেপ, এই শূন্যতা তাঁকে যেন ছায়ার মতো অনুসরণ করে চলে—প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে।