পর্দায় তাঁকে দেখলে মনে হয়, চরিত্রটাই যেন কথা বলছে! সেখানে অভিনেতা আলাদা করে চোখে পড়েন না। ‘কৌশিক রায়’ (Koushik Roy) ঠিক সেই ধরনের শিল্পী, যিনি নিজের উপস্থিতিকে আড়ালেই রাখতে স্বচ্ছন্দ। জনপ্রিয় ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেও প্রচার, সাক্ষাৎকার বা সমাজ মাধ্যমে নিজেকে সামনে আনতে তিনি আগ্রহী নন। তাঁর বিশ্বাস, একজন অভিনেতাকে মানুষ মনে রাখুক তার অভিনয়ের জন্য। এর বাইরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি জানার দরকার নেই।
এই নীরবতা আর সচেতন দূরত্বই তাঁকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। প্রসঙ্গত, কলকাতায় তাঁর পা রাখা মূলত পড়াশোনার জন্য। বহরমপুর থেকে প্রায় দুই দশক আগে এই শহরে আসা, তখনও অভিনয় তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠেনি। জীবন অন্য পথে এগিয়েছিল, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করে তখন তিনি দিল্লিতে কর্পোরেট চাকরি করতেন। মার্কেটিংয়ের কাজ, নিয়মবদ্ধ দিনযাপন, কিন্তু ভিতরে ভিতরে জন্মাতে থাকে অভিনয়ের প্রতি অদ্ভুত এক টান। শেষমেশ সেই টানই তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে, আর নয় এবার অভিনয়ই হবে জীবনের মূল রাস্তা!
কলকাতায় ফিরে আসা, স্থায়ী চাকরি ছেড়ে দিয়ে।এখানেই থিয়েটারের সূত্র ধরেই একের পর এক মানুষের সঙ্গে পরিচয়, কাজ শেখা আর নিজের ভিত শক্ত করা। পরবর্তীতে সোহাগ সেনের হাত ধরে টেলিভিশনের দুনিয়ায় পা রাখেন তিনি। রাজ চক্রবর্তীর প্রথম বড় সুযোগ দেন অভিনেতাকে। যেখানে কেউ মুখ্য চরিত্র দূরের কথা পার্শ্বচরিত্রেও নতুন একজনকে নিয়ে ভয় পান, সেখানে কৌশিক রায় আত্মপ্রকাশ এই অভিনয় করেন, ‘জোশ’ ধারাবাহিকের একেবারে মুখ্য চরিত্রে! এরপর তার অভিনয়ের রাস্তাটা যেন অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
চেহারা আর ব্যক্তিত্বের কারণে এক সময় তাঁকে নির্দিষ্ট ধাঁচের চরিত্রেই বেশি দেখা যেত। যেমন বুদ্ধিজীবী বা ছাত্রনেতা। কিন্তু কৌশিক জানতেন, এই গণ্ডির বাইরেও তাঁর বলার মতো অনেক কিছু আছে। তাই সচেতনভাবেই সেই ইমেজ ভাঙার চেষ্টা করেন। ‘মাটি’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি প্রমাণ করেন যে টেলিভিশনের পরিচিত মুখ হয়েও বড় পর্দায় নিজের আলাদা ছাপ রাখা সম্ভব। এরপর তারানাথ তান্ত্রিকের চরিত্রেও ভালই সাড়া পেয়েছিলেন তিনি। করেছেন একাধিক ওয়েব সিরিজও।
আরও পড়ুনঃ ‘সবাই মা-বাবাকে মিথ্যে বলে সিনেমায় যেত, আমি মিথ্যে বলে যেতাম মন্দিরে’ ছবি মুক্তির প্রাক্কালে, আধ্যাত্মিক শিকড়ের কথা জানালেন লেডি সুপারস্টার শুভশ্রী!
তবে, স্টার জলসার প্রতিটি ধারাবাহিককে তার অভিনয়, তাঁকে অনেকের প্রিয় অভিনেতার তালিকায় পাকাপোক্ত স্থান করে দিয়েছে। তালিকায় রয়েছে, খড়কুটো, পুণ্যিপুকুর, বোঝেনা সে বোঝেনা, ফাগুন বউ। বর্তমানে ‘মিলন হবে কত দিনে’ ধারাবাহিকে খলনায়ক চরিত্রে তাঁর উপস্থিতি আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে, আলোয় না থেকেও একজন অভিনেতা গভীর ছাপ ফেলতে পারেন। শেষে যে কথাটা না বললেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী পোর্শিয়া এবং কন্যাকে নিয়ে তাঁর ছোট্ট জগৎ। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয়। এরই সঙ্গে গুপ্ত বিদ্যার প্রতিও ন্যাক এবং চর্চা আছে অভিনেতার!






