রাজ চক্রবর্তীর আগামী ছবি ‘হোক কলরব’ এর টিজার মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আলোচনা আর বিতর্কে সরগরম টলিপাড়া। যাদবপুরের ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবিতে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনীত চরিত্র ‘ক্ষুদিরাম চাকী’ ঘিরেই শুরু হয়েছে মূল বিতর্ক। অনেকের দাবি, এই নাম ও চরিত্র শহিদ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতির সঙ্গে মিল রেখে তৈরি। টিজার প্রকাশের পর সমাজমাধ্যমে একাধিক সংগঠন এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে এবং সেখান থেকেই বিতর্ক নতুন মাত্রা পায়।
‘সারা বাংলা শিল্প সাহিত্য সম্মিলনী’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান অভিযোগ তোলে, ছবির এই চরিত্র ও কিছু সংলাপ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর প্রতি অসম্মানজনক। প্রতিষ্ঠানের তরফে সুমন দাস সমাজমাধ্যমে লেখেন, অগ্নিযুগের এক মহান বিপ্লবীর নামের সঙ্গে এই ধরনের উপস্থাপনা গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁদের বক্তব্য, শুধু নাম নয়, ছবির কিছু সংলাপও আপত্তিকর। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই বিষয়টি নিয়ে সাংস্কৃতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
আনন্দবাজার ডট কমের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হলে রাজ চক্রবর্তীর পাল্টা মন্তব্য আরও আলোড়ন তোলে। তাঁর দাবি, এই বিতর্ক মূলত বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির প্ররোচনায় তৈরি। রাজ বলেন, যারা সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বঙ্কিমদা বলে সম্বোধন করে, আবার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনাতেও যুক্ত থাকে, তারাই আজ ক্ষুদিরাম বসু নিয়ে কথা বলছে। তাঁর মতে, অভিযোগকারীদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক এবং ছবির বিষয়বস্তুকে বিকৃত ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।
তবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্রতীন দাস রাজের বক্তব্য মানতে নারাজ। তিনি জানান, এই মঞ্চ কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নয়। এটি বাংলার সমস্ত সাংস্কৃতিক মানুষের জন্য একটি মুক্ত প্ল্যাটফর্ম। তাঁদের লক্ষ্য বাংলার সংস্কৃতিবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করা। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, অতীতে কাজী নজরুল ইসলামের গান বিকৃত করার অভিযোগে এ আর রহমানের বিরুদ্ধেও তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতাতেই ‘হোক কলরব’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বলে দাবি তাঁর।
আরও পড়ুনঃ শুটিং ফ্লোরে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতাকে তীব্র অপ’মান প্রযোজকের! বিরাট বড় পদক্ষেপ নেন প্রসেনজিত চ্যাটার্জি
এই সমস্ত অভিযোগের জবাবে রাজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, বাঙালি নিজের কৃতী মানুষদের সম্মান দিতে জানে এবং ভাষা নিয়ে সৃজনশীল খেলাও করতে ভালবাসে। তবে তা কখনওই অসম্মানজনক উদ্দেশ্যে নয়। তাঁর দাবি, ছবির সংলাপের মাধ্যমে পরাধীন ভারতে বিপ্লবীদের প্রতি হওয়া অন্যায়ের কথাই তুলে ধরা হবে। আধুনিক ভারতে কোনও অন্যায় নয়, বরং ইতিহাসের প্রতি সম্মানই ছবির মূল বার্তা। তাই টিজার দেখে আগাম রায় না দেওয়ার আবেদন জানিয়ে রাজ স্পষ্ট করেন, ‘হোক কলরব’ কোনও রাজনৈতিক দলের প্রচারমূলক ছবি নয়, বরং সময়ের কথা বলার এক সাহসী প্রয়াস।






