মাটি ফুঁড়ে বের হয়েছিল শিবলিঙ্গ! প্রতিবছর বাড়ছে দৈর্ঘ্য! শিবরাত্রির এই শুভক্ষণে জেনে নিন মহাদেবের লীলা কথা

আজ মহাশিবরাত্রি। এইদিনটির একটু অত্যন্ত বিশেষ শৈব ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের জন্য। প্রতিবছর আজকের দিনে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম দেখা যায় শিব মন্দিরে। বাবার মাথায় জল ঢালার জন্য আসে তার সমস্ত ভক্তরা। সকল ভক্তদেরই ধারণা বাবার দরবার থেকে খালি হাতে ফেরেনা কেউই। বাবাকে সন্তুষ্ট করা অত্যন্ত সহজ এবং প্রাণ ভরে ডাকলেই তিনি পূরণ করেন সকল ভক্তদের মন বাঞ্চা। সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মহাদেবের বহু মন্দির। কোথাও জ্যোতির্লিঙ্গ, কোথাও শিবলিঙ্গের রূপে পূজিত হন দেবাদিদেব মহাদেব।

তার মন্দিরের মধ্যে অনেক মন্দির রেয়েছে যেগুলি মানব নির্মিত। তবে এরকমও অনেক মন্দির রয়েছে যেগুলি সৃষ্টি হয়ে নিজে থেকেই অর্থাৎ স্বয়ম্ভু। ভারতের বিভিন্ন স্থানে বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে পূজিত হন তিনি। যাকে বলা হয় দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ। সেগুলি হল – সোমনাথ মন্দির যেটি অবস্থিত গুজরাতে, মল্লিকার্জুন মন্দির অবস্থিত অন্ধপ্রদেশ, মহাকালেশ্বর মন্দির মধ্যপ্রদেশে, ওঁকারেশ্বর মন্দির মধ্যপ্রদেশে, কেদারনাথ উত্তরাখণ্ডে, ভিমেশ্বর মহারাষ্ট্রে, বিশ্বনাথ উত্তরপ্রদেশে, ত্র্যম্বকেশ্বর মহারাষ্ট্রে, বৈদ্যনাথ ঝাড়খণ্ড, নাগেশ্বর উত্তরাখণ্ড/ গুজরাতে, রামেশ্বর তামিলনাড়ুতে এবং ঘৃৃষ্ণেশ্বর মহারাষ্ট্রে।

তবে আপনারা কি জানেন এই ওঙ্কার, নিরাকার, নির্বিকার স্বয়ম্ভুর আরও একটি মন্দির আছে সেই মন্দিরটিকে মনে করা হয় অত্যন্ত চমৎকারী। মনে করা হয় এখানে মহাদেব তিলে টিলে বৃদ্ধি পান। ভোলানাথের এই মন্দিরটি অবস্থিত উত্তরপ্রদেশের হমীরপুরে। দেবাদিদেবের এই মন্দিরটিকে বলা হয় সিংঘমহেশ্বরী মন্দির বা সিংহ মহেশ্বর মহাদেব মন্দির। এখানেই যমুনার তীরে অবস্থিত দেবী পার্বতী এবং মহেশ্বরের প্রাচীন মূর্তি। এই মন্দিরের পাশে নিজে থেকেই গজিয়ে ওঠে চন্দন গাছ আর মন্দিরের চারিদিকে বেড়ে ওঠা এই শতাধিক চন্দন গাছ দিয়েই শৃঙ্গার করা হয় থেকে মল্লিকার্জুনের।

আরো পড়ুন: ‘গরমে তোষক ভিজিয়ে শুয়েছি! রিক্সা ভাড়া দেওয়ার‌ই টাকা ছিল না সেখান থেকে কলকাতায় পড়তে এসেছি নিজের জেদে!’ নারী দিবসে মিমির উড়ানকে সম্মান আমাদের!

অনেকেই মনে করেন এই মন্দিরে কিছু মানদ করলে মল্লিকার্জুন তার ভক্তদের খালি হাতে ফেরাননা। ঐতিহাসিকদের মতে, এই মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল গুপ্ত যুগে। সেখানে স্থানীয় মানুষরা বিশ্বাস করেন শিবলিঙ্গটি নিজে থেকেই মাটি ভেদ করে আবির্ভূত হয়েছে এবং এরকম অদ্ভুত রূপ নিয়ে নিয়েছে। প্রতিবছর বৃদ্ধি পায় এই শিবলিঙ্গের দৈর্ঘ্য। চালের একটি দানার সমান দৈর্ঘ্য বাড়ে প্রতিবছর। মাটি ভেদ করে এই শিবলিঙ্গ আবির্ভূত হয়েছে বলে এই শিবলিঙ্গটিকে বলা হয় পাতালি শিবলিঙ্গ।

এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনেক কাহিনী তবে একটি কাহিনী অনুযায়ী একসময় যমুনায় ভয়াবহ বন্যা দেখা যায় তখন স্থানীয় এবং ঋষিমুনিরা সিদ্ধান্ত নেন শিবলিঙ্গটিকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার। তখন শিবলিঙ্গটির সামনে প্রার্থনা করে খোদাইয়ের কাজ শুরু করা হয়, কিন্তু অনেক খোদাই করেও কেউ তার অন্ত খুঁজে পায়নি। তখন সকলের শিবলিঙ্গর মাহাত্ম্য স্বীকার করে। তারপরই সেখানে মন্দির তৈরি হয়। জানা গেছে প্রায় ৪০ বছর আগে মন্দিরের মহন্তের গুরু একটি চন্দন গাছ লাগিয়েছিলেন তারপর থেকেই সেখানে নিজে থেকেই জন্মায় চন্দন গাছ। তারপর থেকেই এখানে ভক্তদের আনাগোনা শুনে হয়। চন্দন, ভাঙ, ধুতুরা দিয়ে পুজো করা হয় শিবলিঙ্গর। সকলেই মনে করে এখানে মহাদেবের কাছে যে যা চায় মহাদেব তার সেই ইচ্ছাপূরণ করেন।