স্মার্ট নন্দিনী দির পর এবার উঠে এল আরও এক রাঁধুনির নাম। ইনি রাগী মাসি নামে খ্যাত। রাসবিহারী মোড়, দুপুর রোদে লাঞ্চ সারতে সাথে সুস্বাদু ঘরোয়া খাবারের স্বাদ মেটাতে সকলেই সেই হোটেলে ভিড় জমায়। তবে শুধু সুস্বাদু ঘরোয়া খাবার নয় সঙ্গে জোটে মাসির গালাগাল। তবুও এই হোটেলের নিয়মিত ভিড় হয় গ্রাহকদের। কিন্তু, রান্না করতে করতে এতো কেন রেগে যান রাসবিহারীতে পাইস হোটেল চালানো এই মাসি?
হরেক রকম সুস্বাদু পদ পাওয়া যায় সেখানে। কালো জিরে, পাঁচফোড়ন দিয়ে কাতলা মাছের ঝোল হোক কিংবা আলু বেগুনের চচ্চরি। সকাল থেকে হসেসব রেঁধে গ্রাহকদের যত্ন নিয়ে খাওয়ান মাসি। কিন্তু পান থেকে চুন খসলেই অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন। কেউ যদি টাকা কম দিতে চান অর্থাৎ ৪০ টাকার মাছের ঝোল ৩৫ টাকায় নিতে চাইলেই জুটবে মাসির ‘ধ্যাতানি’।
নিত্যদিনের কেন হঠাৎ হঠাৎ তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন রাসবিহারীর মাসি? এবার মাসির মুখেই জানা গেল কারণ। মাসি বলেন, “রেগে যাব না? রাগালে তো রেগে যাবই। কতক্ষণ ধৈর্য ধরে রাখা যায়? ধৈর্যের তো একটা সীমা আছে। আমাকে রাগানোর জন্য ইচ্ছে করে সকলে আমার পিছনে লাগে। কাস্টমাররা বলে আমার গালাগাল না শুনলে নাকি ভাত হজম হয় না ওদের। রেগে গেলে আমি কাউকে ছাড়ি না। আমার বাবাকেও ছাড়ি না।”
কিন্তু মাসি বাইরে থেকে যতই রাগী হোক না কেন, ভিতর থেকে ততই নরম মনের। সবটাই তিনি একা হাতে সামলান। প্রায় ৫০ বছর ধরে রাসবিহারীতে এই হোটেল চালাচ্ছেন মাসি। আগে সোনারপুর থেকে ভোরের প্রথম ট্রেনে চেপে বালিগঞ্জে আসতেন মাসি। তবে বয়সের ভারে এখন তা আর সম্ভব হয় না। বর্তমানে দোকান আগলে ফুটপাথেই বসবাস করেন রাগী মাসি।
নিজের জীবন সংগ্রামের কাহিনি বর্ণনা করতে গিয়ে মাসি বলেন, “৫০ বছর হয়ে গেল এই দোকান চালাচ্ছি। আগে গতর ছিল, কিন্তু পয়সা ছিল না। এখন আর শরীর যুতসই নয়। তবে প্রচুর খদ্দের আসেন। অনেক সময় সামলে উঠতে পারি না একা হাতে। কাজ করার লোক পাই না তেমন। যদিও এখন দোকান চালিয়ে অনেক শান্তি। সকলে আমায় চেনে, ভালোবাসে। আগে কেউ দু’চোক্ষে সহ্য করতে পারত না। আসলে আমি তো মুখ্যু মানুষ। দোতলা বাড়ি আমরা লাগবে না। এখানে মরে গেলেও খুশিতে মরব।”