গিরিশচন্দ্র ঘোষের সময়ে বাংলা নাট্যমঞ্চে ছিলেন কয়েক জন কিংবদন্তি নটী—বিনোদিনী, তিনকড়ি দাসী, প্রভা দেবী এবং তারাসুন্দরী। প্রথম তিনজনকে নিয়ে বহু কাজ হয়েছে, কিন্তু তারাসুন্দরী যেন ভুলে যাওয়া এক নাম। সেই নটীর জীবন ও লড়াইকে এবার মঞ্চে ফিরিয়ে আনতে চলেছেন অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী। নভেম্বরে মঞ্চস্থ হতে চলেছে তাঁর নতুন নাটক ‘তারাসুন্দরী’, যেখানে মুখ্য ভূমিকায় থাকছেন গার্গী নিজেই।
গার্গীর কথায়, “তারাসুন্দরী ছিলেন সবচেয়ে ভার্সেটাইল অভিনেত্রী, কিন্তু তিনিই সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিতা। তাঁকে নিয়ে কোনও গবেষণামূলক কাজ হয়নি। কয়েকটি ছবি আছে, সেগুলোও ঝাপসা। তাই মনে হল, ওঁকে নিয়ে কাজ করার সময় এসেছে।” অভিনেত্রীর মতে, তারাসুন্দরীর জীবনে একসঙ্গে ছিল হাসি ও কান্নার ছায়া—যেমন ছিল তাঁর অভিনয়ে, তেমনই ছিল তাঁর বাস্তব জীবনে।
এই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে গার্গী বুঝেছেন, তারাসুন্দরী শুধু মঞ্চে নয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ছিলেন দুর্দম সাহসী। নাট্যদুনিয়ায় নিজের জায়গা বানাতে গিয়ে তাঁকে লড়তে হয়েছে সমাজের নিয়মের সঙ্গে। ক্লাসিক থিয়েটারের অভিনেতা অমরেন্দ্র দত্তের সঙ্গে প্রেমে পড়লেও, তাঁর বিশ্বাসভঙ্গের পর তারাসুন্দরী আইনি লড়াই করেন এবং মামলা জেতেনও। তাই অনেকের মতে, তিনি শুধু প্রতিভাশালী নটী নন, আত্মসম্মানের প্রতীকও।
তারাসুন্দরীর জীবনে পরেও আসে যন্ত্রণা। অপরেশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে জন্ম নেয় একমাত্র সন্তান নির্মল, যাকে পরে হারাতে হয় তাঁকে। তখনই নটী বলেন, “বলতে পারো কে সঙ্গ দিয়েছে আমাকে? কে গ্রহণ করেছে? তা এই রঙ্গমঞ্চ।” সেই দগ্ধ হৃদয়, সেই মঞ্চপ্রেমই আজ গার্গীর অভিনয়ে নতুন প্রাণ পাবে।
আরও পড়ুনঃ “আমি কাউকে সুযোগ করে দিতে পারি না, শুধু শেখাতে পারি! কিন্তু সবাই ভাবে আমার কাছে গান শিখলেই জি বাংলায় চান্স পাওয়া যায়”, “নামের লোভে গান শিখতে আসে অনেকে, সুযোগ না পেয়েই উধাও হয়ে যান শিক্ষার্থীরা”!- নিজের গান শেখানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে অকপট ইমন চক্রবর্তী
নিজের জীবন প্রসঙ্গে গার্গী জানালেন, “আমি নিজের মতো করে বাঁচি, কাজ করি। আমি কোনও ভাবেই উপেক্ষিত নই।” প্রেমের প্রশ্নে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেন, “প্রেম এসেছে ঠিকই, কিন্তু প্রেমে ভেসে যাওয়ার মতো মেয়ে আমি নই। কোথায় বেড়া টানতে হয়, সেটা ভাল জানি।” অর্থাৎ, বাস্তবেও তিনি তারাসুন্দরীর মতোই দৃঢ়, আত্মসম্মানী এক নারী।






