হাওড়ার আন্দুলের বাসিন্দা পাপিয়া ঘোষাল (Papiya Ghosal), যিনি ‘রাশিয়ান দিদি’ নামে পরিচিত, সম্প্রতি তাঁর চায়ের দোকান ‘তে আমো’ বন্ধের মুখোমুখি হয়েছেন। হাওড়ার অঙ্কুরহাটিতে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে তাঁর এই দোকান ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই দোকানটি মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। দোকানে চায়ের দাম ছিল মাত্র ৭ টাকা, যা গ্রাহকদের আকর্ষণ করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই দোকান বন্ধের নোটিস পেয়ে হতাশ পাপিয়া ঘোষাল।
দোকান বন্ধের পেছনে স্থানীয় ক্লাবের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের দাবি, দোকানের সামনে অতিরিক্ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছিল, যা ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সমস্যা তৈরি করছিল। এছাড়া, পাপিয়া ঘোষালের আধুনিক পোশাক এবং দোকানের পরিবেশ কিছু মানুষের কাছে অস্বস্তিকর ছিল। তবে, পাপিয়া ঘোষাল অভিযোগ করেছেন যে, লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে তাঁকে দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
স্থানীয় ক্লাবের অভিযোগ ছিল, পাপিয়া নিজে দোকান চালাচ্ছিলেন না এবং বাইরে থেকে সাহায্য নিচ্ছিলেন, যা সেই এলাকার নিয়মের বিরুদ্ধে। এছাড়া, তাঁর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে কিছু ছবি ছিল, যা তারা মনে করতেন সমাজকে ভুল পথে পরিচালনা করছে। এ কারণে, ক্লাবটি দোকান বন্ধ করার জন্য পোস্টার লাগিয়ে দেয়। পাপিয়া ঘোষাল অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় কিছু মানুষের চাপ ও লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে তাঁকে দোকান বন্ধ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিছু লোক এসে নোটিশ লাগিয়ে যায় যে, আমি যেন দোকান না খুলি। তাঁরা আমাকে খুব অপমান করেছে। স্থানীয় প্রশাসনও আমাকে সাহায্য করেনি। আমি আবার দোকান খুলতে চাই। আমার সৌন্দর্য বা পোশাক আমার চরিত্রের মাপকাঠি হতে পারে না।’
পাপিয়া ঘোষাল তাঁর দোকান বন্ধের ঘটনায় লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘একজন মহিলা আধুনিক পোশাক পরে চা বিক্রি করবেন, এটা কিছু মানুষ মেনে নিতে পারেননি।’ তিনি আরও জানান, দোকান বন্ধের আগে তিনি স্থানীয় ক্লাবকে এককালীন ৪০,০০০ টাকা দিয়েছিলেন এবং মাসে ৩,০০০ টাকা করে মাসোহারা দিতেন।
আরও পড়ুনঃ ফুলকি, জগদ্ধাত্রীকে হারিয়ে অভিনেতা, অভিনেত্রী হোক বা খলনায়িকা, সব ক্যাটাগরিতেই বাজিমাত কথার!
পাপিয়া ঘোষাল পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে, পুলিশ জানিয়েছে যে, এফআইআর দায়ের করা হলেও, পাপিয়া ঘোষাল থানায় যাননি। তদন্ত চলছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ‘রাশিয়ান দিদি’র দোকান বন্ধের ঘটনায় সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে পাপিয়া ঘোষালের পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ স্থানীয় ক্লাবের অভিযোগকে সমর্থন করেছেন। এ ঘটনায় লিঙ্গ বৈষম্য এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রশ্ন উঠেছে।