একটা সময় টলিউডের অন্যতম সুদর্শন অভিনেতা ছিলেন অভিনেতা বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জী(Biswajit Chatterjee)। বলা হয়ে থাকে যদি সেই সময় মহানায়ক উত্তম কুমারকে(Mahanayak Uttam Kumar) কেউ টেক্কা দিতে পারতেন তাহলে তা পারার ক্ষমতা একমাত্র ছিল বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জীর মধ্যে। বাংলার পাশাপাশি হিন্দি সিনে দুনিয়াতেও সমান দাপট দেখিয়েছিলেন এই সুদর্শন অভিনেতা।
বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জীর বাবা রণজিৎ চ্যাটার্জী পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। তবে ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি এক অদম্য টান ছিল বিশ্বজিতের। পরিবারে অমতে গিয়ে লুকিয়ে নাটক করতেন। বাড়িতে জানাজানি হতেই তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। গিয়ে ওঠেন এক বন্ধুর বাড়িতে। এরপর মায়ামৃগ (১৯৬০), দুই ভাই (১৯৬১) এর মতো কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করে মুম্বাই চলে যান এই অভিনেতা।
স্বপ্ন নগরীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে বক্সিং থেকে ঘোড়ায় চড়া সবকিছুই শিখেছিলেন বিশ্বজিৎ। উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে তিনি হিন্দি চলচ্চিত্র বিশ সাল বাদ-এ অভিনয় করেন। কিন্তু সেই সময় রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন বিশ্বজিৎ। কিন্তু মুম্বাইতে থাকতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ইরা দেবীর। ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ হন তাঁরা। এরপরেই এক বড় সিদ্ধান্ত নেন বিশ্বজিৎ। স্ত্রী ছোট ছোট দুই সন্তান প্রসেনজিৎ ও পল্লবীকে ছেড়ে ইরাকে বিয়ে করেন বিশ্বজিৎ। তাঁর এই বিয়ে নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল। তারই বিয়ে একেবারেই ভালো চোখে মেনে নেয়নি কলকাতাবাসী।
অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বারবার বিভিন্ন পোস্টে উল্লেখ করেছেন কিভাবে তাঁদের মা রত্না চট্টোপাধ্যায় একার হাতে তাঁদের দুই ভাই বোনকে বড় করে তুলেছেন। অভিনেতা জানিয়েছিলেন তার মা ছিলেন ভীষণ রকম সাহসী। বাবা বিশ্বজিৎ দ্বিতীয় সংসার পাতলেও ভেঙে পড়েননি রত্না। অভাব অনটনকে সঙ্গী করে এই জীবন যুদ্ধ লড়ে গেছেন তিনি। বিশ্বজিতের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙেননি। দুই ছেলে-মেয়ের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক যাতে স্বাভাবিক থাকে সেই চেষ্টাই করে গেছেন রত্না দেবী। বাবা নয় বরং প্রসেনজিৎ-পল্লবীর মাথায় বট গাছের ছায়া ছিলেন রত্নাদেবী। বাবার অভাব কোনদিনই ছেলে-মেয়েকে অনুভব করতে দেননি রত্না দেবী।
তবে বাবার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ইরা চাটার্জিকে নিয়ে কোনও খারাপ ধারণা, কোনরকম বিবাদের সম্পর্ক নেই প্রসেনজিৎ-পল্লবীর। ইরা দেবীর সঙ্গে বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জীর একটি মেয়ে রয়েছেন সম্ভাবী। পল্লবী জানিয়েছিলেন ছোট বোনকে নিয়ে বা বাবার দ্বিতীয় বিয়েকে নিয়ে এখন তাঁর মনে কোনও অভিমান নেই। বরং তিনি খুশি যে ৮৬ বছর বয়স বিশ্বজিত চ্যাটার্জীকে আজও সমখনভাবে ভালবাসেন ইরা দেবী। তবে কলকাতা নয় আজও বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জির বাস মুম্বাই। যদিও ছেলে ও মেয়ের প্রতিনিয়তই খোঁজখবর রাখেন তিনি।