‘সমাজে বিপজ্জনক বার্তা ছড়াচ্ছে, বিকৃত মানসিকতাকে বাহবা দিয়ে অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে!’ দর্শকদের ক্ষোভ, আ’ত্মহ’ত্যা-অপরাধ-মিথ্যা ধ’র্ষ’ণের অতিরিক্ততা নিয়ে বিতর্কের শিরোনামে স্টার জলসার ‘চিরসখা’! উঠছে সংবেদনশীল বিষয়কে অতিরঞ্জিত করার অভিযোগ!

স্টার জলসার ‘চিরসখা’ (Chiroshokha) ধারাবাহিক নিয়ে যে আলোচনার ঝড় উঠেছে, তার মূল প্রশ্নটা এখন আর গল্পের টানটান উত্তেজনা নয়। বরং এই ধারাবাহিক যে সমাজের প্রতিচ্ছবি দেখানোর দাবি করে, সেটার প্রভাব আদৌ স্বাস্থ্যকর কি না। কারণ গল্পের ভেতরে যে সম্পর্ক, সংকট আর চরিত্রগুলোর আচরণ তুলে ধরা হচ্ছে, অনেকেই মনে করছেন তা বাস্তব জীবনের জটিলতাকে না বুঝিয়ে আরও বিশৃঙ্খল করে তুলছে। বিশেষ করে পর’কীয়া, প্রতা’রণা, ষড়’যন্ত্র কিংবা অপরাধের বিষয়কে এই ধারাবাহিক যত সহজে দেখিয়ে যাচ্ছে, তা দর্শকের কাছে কি ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে না?

ধারাবাহিকের শুরুতেই কমলিনীর জীবনের দুই দশক ধরে চলা অযথা বৈধব্যের কথা উঠে আসে। যেটা নিঃসন্দেহে একটা গভীর সামাজিক ব্যথার জায়গা। কিন্তু সেই গল্পের মাঝেই স্বতন্ত্র আর কমলিনীর সম্পর্ককে কেন্দ্র করে যেভাবে নানা সন্দেহ, দোষারোপ আর সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে, তা অনেকের মতে খুব সহজভাবে নাটকীকরণের খাতিরে ব্যবহার হয়েছে। বাস্তব সমাজে সম্পর্কের মর্যাদা, মানুষের সহমর্মিতা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এখানে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কখনও আবার অকারণে চরিত্রদের দোষী বানিয়ে। এতে কি দর্শকের মনে আরও ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে না? সেই প্রশ্ন উঠছে স্বাভাবিক ভাবেই।

আবার কমলিনীর প্রাক্তন চন্দ্রকে ঘিরে তৈরি হওয়া নানান বিতর্ক। যেমন তার পূর্ব জীবনের প্রতা’রণা, একাধিক সম্পর্ক এমনকি চুরি আর নারী পাচা’রের মতো অপরাধ তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এত বড় বড় সামাজিক অপরাধকে নিজেদের সুবিধামতো সাজিয়ে দেখানোর মধ্যে সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ কোথায়? বাস্তবে এই ধরনের অপরাধের পরিণতি একটা পরিবারকে ভুগতে হয় বহু বছর ধরে অনেক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে। ধারাবাহিক সেই বাস্তবটিকে গুরুত্ব না দিয়ে মাত্র কয়েক পর্বে সবকিছু দেখাতে গিয়ে যেন অপরাধকে স্বাভাবিক করে তুলছে কি না, সেটাও অনেক দর্শকের শঙ্কার জায়গা।

এদিকে প্লুটোর আ’ত্মহ’ত্যার ঘটনা কিংবা বুবলাইয়ের নাটকীয় আ’ত্মহ’ত্যার অভিনয়, এই দুই দিক নিয়েও প্রশ্ন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমাজে সচেতনতা বাড়ানোর বদলে ধারাবাহিক যেন আ’ত্মহ’ত্যাকে খুব স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখাতে শুরু করেছে! এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বর্ষার নিজের জামাকাপড় ছিঁড়ে মিথ্যা ধ’র্ষ’ণের অভিযোগ তোলা একটা অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়, যা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সাবধানতা জরুরি ছিল। কারণ এগুলো এমন কিছু বিষয়, যেগুলো সাধারণ মানুষকে শিক্ষা দিতে পারে আবার ভুল দিকেও ঠেলে দিতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ‘দীর্ঘ সময় পর টেলিভিশনে কাজ পেয়েছি, নাটকের জন্য কোন‌ও সরকারি হল পাচ্ছি না! কেউ না কেউ তো কলকাঠি নাড়ছে বুঝতে পারছি!’ কম রোজগার, কম সুযোগ আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে অভিনেত্রী নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়কে

সব মিলিয়ে বড় একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, টেলিভিশন যদি সমাজের আয়না হয়, তবে এই আয়নায় কি সত্যি সত্যিই সমাজকে দেখানো হচ্ছে? নাকি অপরাধকে বাহবা দিয়ে শুধু চমক সৃষ্টি করে রেটিং বাড়ানোর চেষ্টা? দর্শকের একাংশ মনে করছেন, ‘চিরসখা’ এখন এমন সব বিষয় পরপর দেখাচ্ছে যেগুলোর সাথে বাস্তবের সংযোগ থাকা সত্ত্বেও উপস্থাপনাটাই অনেক সময় বিচ্যুত কিংবা অতিরঞ্জিত। ফলে গল্প যেমন এগোচ্ছে, তেমনই বাড়ছে দায়িত্ববোধের প্রশ্ন! এই ধারাবাহিকের বার্তা কি সত্যিই সমাজকে কোনও ইতিবাচক পথে ঠেলছে, নাকি ভুল ধারণাকে আরও গভীর করছে? সময়ই তার উত্তর দেবে, তবে বিতর্ক এখনই থামছে না।

You cannot copy content of this page