“মা দুর্গার থেকে শক্তিশালী আমার মা!” “মা-কে কষ্ট দিচ্ছে, ছেলে কি সহ্য করতে পারে?”— ছোট্ট কবীরের সরল প্রশ্নে ভিজল কোয়েলের চোখ! মহিষাসুরমর্দিনীর রূপে মাকে দেখে অবাক কবীর, তুলছে হাজারো প্রশ্ন!

শতাব্দীপ্রাচীন কলকাতার মল্লিক বাড়ির দুর্গাপুজোকে ঘিরে প্রতি বছরই বিশেষ উত্তেজনা তৈরি হয়। এই বাড়িরই মেয়ে টলিকুইন কোয়েল মল্লিকের (Koel Mallick) কাছে চার দিন মানে আলাদা আনন্দ, আলাদা আবেগ। অভিনেত্রী হলেও পুজোর সময়ে তিনি কখনও কাজের ব্যস্ততাকে গুরুত্ব দেন না, এই কয়েকটা দিন পরিবারের ঐতিহ্যকেই সবার উপরে রাখেন। বাড়ির শাঁখ বাজানোর দায়িত্বও তাঁর কাঁধেই রয়েছে বহু বছর ধরে, আর তা তিনি মন দিয়ে পালনও করেন। কোয়েলের কাছে পুজোর মানে এখন আর শুধু ব্যক্তিগত আনন্দ নয়, বরং নতুন প্রজন্মের চোখ দিয়ে উৎসবকে নতুন করে দেখা।

মা হওয়ার পর থেকেই দুর্গা পুজো তাঁর কাছে অন্য রকম হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বিসর্জনে স্বামী ও বাবার হাত ধরে হাঁটার অভিনেত্রীর সেই দৃশ্য অনেকের মনে দাগ কেটেছিল। তার পরের বছরেই দুই সন্তানের মা হিসেবে কোয়েলের জীবনে অনেক কিছু বদলেছে। এবার মেয়ে কাব্যের প্রথম, তবে ছেলে কবীর এখন বুঝতে শিখেছে দুর্গা পুজোর উন্মাদনা। পুজোর সাজ, শাড়ি কিংবা গয়না— সবকিছুতেই কোয়েল নিজেকে রাখেন পিছনের সারিতে। বাড়ির ছোটদের জন্যই তাঁর সবার আগে চিন্তা।

কবীরের জন্য নতুন জামাকাপড়ের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে কাব্যের জন্য বিশেষ পোশাক তৈরির দায়িত্বও তিনি সেরে ফেলেছেন অনেক আগেই। ছেলে এখন বাবার কাছ থেকে কাঁসর-ঘণ্টা বাজানো শিখে নিয়েছে, আর যেন থামতেই চায় না শুরু করলে। এবার বোনকে পাশে পেয়ে উৎসবের আনন্দ যেন দ্বিগুণ হয়েছে তার। মা হিসেবে কোয়েল বলেন, কবীরকে চোখে চোখে রাখতে হয় ঠিকই, তবে এই বয়সের উচ্ছ্বাস তাঁকে নিজের ছোটবেলার কথা আরও বেশি মনে করিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে পুজোর দিনগুলো তাঁর কাছে এখন যেন আরও মূল্যবান হয়ে উঠেছে।

কোয়েল এদিন জানালেন, ছেলে কবীরকে ছোট থেকেই তিনি গল্প শোনান, মা দুর্গা কীভাবে অসুরের দমন করেন। টেলিভিশনের পর্দায় মায়ের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ রূপ দেখে ছোট্ট কবীর অনেক সময় ভয়ও পায়। গতবার অসুর চরিত্র দেখে আঁতকে উঠেছিল সে। এই বছর তাই শুটিংয়ের আগে মা নিজেই তাকে পরিচয় করিয়ে দেন পর্দার ‘অসুর’ ইন্দ্রজিৎ বসুর সঙ্গে, যেন ক্যামেরার ভয়টা মুছে যায়। তবুও কবীরের নতুন প্রশ্ন— মা দুর্গার শক্তি বেশি, না কি তার নিজের মায়ের? ছেলের এইসব প্রশ্নে অনেক সময় কোয়েল কী বলবেন ভেবে পান না, শুধু হাসিমুখে বোঝান, মা দুর্গার শক্তির সঙ্গে তুলনা চলে না!

আরও পড়ুনঃ “অভিনয় থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলাম!”– দীর্ঘ বিরতির পর মুখ খুললেন কৃষ্ণকিশোর মুখোপাধ্যায়! কোথায় ছিলেন এতদিন? কমলিকার প্রেমই কি কেড়ে নিয়েছিল তাঁর সবকিছু? একটা প্রেম, একাধিক আক্ষেপ নিয়ে অকপট অভিনেতা!

উল্লেখ্য, গত বছর নানা কারণে মল্লিক বাড়ির পুজো দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ ছিল। কিন্তু এ বছর সেই বাধা কাটিয়ে আবার খুলছে শতবর্ষের পুরনো এই পুজোর দরজা। পরিবারের সবার সঙ্গে কোয়েল এবার ছেলেমেয়েকে নিয়েই পুজোর আনন্দে মেতে উঠবেন। মহালয়া থেকে বিসর্জন পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তেই তিনি চান সন্তানদের সঙ্গে থেকে উৎসবকে উপলব্ধি করতে। টলিউডের গ্ল্যামারাস নায়িকা হলেও পুজোর সময় কোয়েল একেবারেই অন্য মানুষ— একজন মেয়ে, একজন মা আর এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের অংশ, যিনি আগলে রাখেন উত্তরাধিকারকে।

You cannot copy content of this page