বাংলার ধারাবাহিকের জগতে অত্যন্ত পরিচিত মুখ ঋতু রায় আচার্য। মেদিনীপুর থেকে এসে ২০১১ সালে তিনি পা রাখেন অভিনয়ের জগতে আমি সেই মেয়ে ধারাবাহিকের মাধ্যমে। তার অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি জিতে নিয়েছেন দর্শকদের মন ও ভালোবাসা। ২০১৮ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন অরুণ মুখার্জী সঙ্গে। এছাড়াও অগ্নিপরীক্ষা, ইচ্ছে নদী, স্ত্রী, হৃদয়হরণ বি এ পাশ, আগুন পাখি, করি খেলা, গৌরী এলো ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন।
এছাড়াও তিনি নাগরিক এবং মন্দবাসার গল্প সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বর্তমানে তিনি অভিনয় করছেন জি বাংলা সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিক জগদ্ধাত্রীতে। ধারাবাহিকে তার মেহেন্দি চরিত্রে অভিনয় বেশ পছন্দ করেছেন দর্শকরা। এইবছর জি বাংলার সোনার সংসারে সেরা খলনায়িকার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। তবে তার অভিনয়ের যাত্রা ছিল না সহজ। এমনটাই তিনি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সংবাদিকদের। মেহেন্দির চরিত্রে তাকে দেখে কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন তিনি দর্শকদের?
তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে “হ্যাঁ আমি আগেও বলেছি আমার দর্শকদের আমি খুব ভালোবাসি এবং তারাও আমায় খুব ভালোবাসে। আগেই সকলেই এই বিষয়টাতে আপত্তি করলেও এখন সকলেই বলছে ভালো লাগছে তোমার চোখের ভঙ্গি খুব সুন্দর। অনেক ধন্যবাদ সকলকে।” তাকে তারপর সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করে তার কেমন লেগেছিল এই চরিত্রে অভিনয় করতে?
তার উত্তরে তিনি বলেন “যেহেতু নেগেটিভ চরিত্র আমি আগে করিনি, সবসময় হিরোইন বা হিরো হিরোইনের বোন গিয়েছিলাম তাই আমার জন্য এটা করতে খুব কঠিন ছিল, প্রথমে সকলের রিঅ্যাকশন দেখে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছিলাম কিন্তু এখন সকলের ভালো লাগছে তাই আমিও আরও ভালো করে করার চেষ্টা করছি।” ৯ বছরের অভিনয়ের যাত্রা, কেমন লাগছে? তিনি জানান “আমি ভরতনাট্যম শিখেছি, ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল অভিনেত্রী হব। আমি এবং আমার বাবা মা সকলেরই। আমি খুব আপ্লুত আমি একের পর এক কাজ পেয়েছি। এই ইন্ডাস্ট্রি আমায় ভরিয়ে দিয়েছে। আর আমি স্নেহাশিস স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ আমায় সুযোগ দেওয়ায় জন্য। তাদের মত সকলের হাত মাথায় ছিল তাই সব করতে পেরেছি।”
মেদিনীপুরের থেকে কলকাতার অভিনয় জগত, কিরকম ছিল? তিনি জানান “খুব কঠিন ছিল, হয়তো অনেকেই মনে হবে কি এমন ব্যাপার মেদিনীপুর থেকে কলকাতা কিন্তু আমার মা নিয়ে আসতেন আর সব সময়ই মার মনে হত আমার মেয়ের কিছু হবে না তো, আমার কিছু হবে না তো। অনেকদিন হয়েছে আমি ট্রেন পায়নি, স্ট্রেশনে রয়েছি। তবে আমার সব কিছুর জন্য সবটা আমার মায়ের কৃতিত্ব।” সিলেকশন কিভাবে হয়েছিল? তিনি বলেছেন “আমি উনিশ কুড়িতে মডেলিং করতাম, তাদের সঙ্গে সানন্দা টিভির চেনা ছিল তো সেখান থেকে তারা আমায় বেছে নিয়েছিল।”
তিনি এও বলেন “সন্দীপ চৌধুরী দাদা আমাদের মধ্যে নেই, তিনি এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে প্রযোজক হিসেবে আমি পেয়েছিলাম আমি খুব ভাগ্যবান। আমায় ১৩০ জন মেয়ের মধ্যে আমায় অভিনেত্রী হিসেবে বেঁচেছিলেন।” ইন্ডাস্ট্রির ভালো খারাপ দুই দিকই আছে তো কোনও দিন কি খারাপটা দেখেছেন? উত্তরে তিনি বলেন “না যেহেতু লিড হিসেবে এসেছিলাম তাই সেরকম কোনও সমস্যা হয়নি তবে যেহেতু মেদিনীপুর থেকে এসেছিলাম তাই লোকের অনেক ছোট বড় কথা শুনতে হয়েছে। চুড়িদার পড়তাম একটু গ্রাম্য পরিবেশের মেয়ে ছিলাম বলে অনেকে হেয় করেছে। কেন আমরা মানুষ হিসেবে একটু সম্মান তো পেতেই পারি।”
আরো পড়ুন: লুকিয়ে প্রেমের দিন শেষ! খুল্লামখুল্লা প্রেম করছেন স্টার জলসার জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকা! কারা জানেন?
“তবে আমার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন তাদের থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি, আমি দুধ খেতে ভালবাসতাম বলে আমার জন্য প্রযোজনা সংস্থা সেটাও আনতেন।” জানিয়েছেন তিনি। মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় এসে থাকাটা অনেক ছিল? তিনি বলেছেন “খুব খারাপ, ছোট ছিলাম বলে মাও থাকতো আমার সঙ্গে, আত্মীয় স্বজনরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। একদিন দুদিন রাখলেও তারপর মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিত কিন্তু যখন হিরোইন হলাম তারাই প্রথম ফোন করেছিল, সেটাও শিখেছি জীবনে।”
তিনি জানিয়েছেন “আমার কাছে সবচেয়ে ভালো মুহুর্ত যখন আমার ব্যানার কলকাতায় লাগানো হয় তখন মা সেটা দেখে কেঁদে দিয়েছিলেন আর খারাপ যখন ধারাবাহিক শেষ হয় তখন খারাপ লাগে। এই ধারাবাহিকেরও সকলে যারা দিদিরা আছে এছাড়াও জগদ্ধাত্রী, উৎসব, স্বয়ম্ভু সকলেই খুব ভালো বন্ধু। আমি আর উৎসব বেস্ট ফ্রেন্ড।” আবার লিডে আসতে চায় কিনা সেটাতে তিনি বলেন “না কারণ লিডে খুব চাপ থাকে, আমি এখন আর করতে চাইনা।”
তিনি অভিভাবকের উদ্যেশ্যে বলেছেন সকলে মা বাবারা যদি তাদের সন্তানের পাশে থাকে তাহলে হয়তো তাদের জীবনটা আরও সহজ হবে। শেষ তিনি বলেছেন জগদ্ধাত্রীতে দোলে একটা চমক আসছে তাই জগদ্ধাত্রী দেখতে থাকুন।