“অপমান হজম করে বাড়িতে কেঁদেছি, কাউকে কখনও কষ্ট দিইনি!”— নিরব সংগ্রামে গড়া জীবনের গল্প শোনালেন এষা ভট্টাচার্য! অভিনয় না জেনেই জয় করেছিলেন পর্দা, ক্যা’ন্সার জয় করেও ফিরেছেন আবার! জীবনকে ভালোবাসার পাঠ দিলেন তিনি

বর্তমান টেলিভিশন (Bengali Television) ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের ধারাটাই যেন রিলে দৌড়ের মতো—একজন একটু থামলেই তার জায়গা দখল করে নেন আরেকজন। অভিনেতা বা অভিনেত্রী যতদিন স্ক্রিনে থাকেন, ততদিনই তাঁরা আলোয়। কিন্তু কাজ থেকে একটু বিরতি নিলেই যেন আর মনে রাখে না কেউ। তেমনই এক কঠিন বাস্তবতার সাক্ষী হলেন অভিনেত্রী ‘এষা ভট্টাচার্য’ (Esha Bhattacharjee)। অসুস্থতার কারণে পর্দা থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছিল তাঁকে, আর সেই ফাঁকে জায়গা নিয়েছেন নতুন মুখেরা। কিন্তু তাঁর জীবনযুদ্ধ থেমে থাকেনি।

আজ প্রায় সবাই জানেন, ‘জগদ্ধাত্রী’ ধারাবাহিকে সানভির চরিত্রে যাঁকে আমরা দেখি, সেই ‘প্রেরণা ভট্টাচার্য’ (Prarona Bhattacharjee) হলেন তাঁর মেয়ে। অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজ মাধ্যমেও প্রেরণা যথেষ্ট জনপ্রিয়। একসময় তিনিই মায়ের ক্যা’ন্সার আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে এনেছিলেন সেখানে। এদিন সাক্ষাৎকারে এষা ভট্টাচার্য নিজেই এবার মুখ খুললেন অসুস্থতা নিয়ে। তার কথায়, ২০১৮ সালে এষার ব্রেস্ট ক্যা’ন্সার ধরা পড়ে। শুরু হয় কেমোথেরাপি, অপারেশন আর রেডিওথেরাপির মতো ক্লান্তিকর চিকিৎসা।

এই কঠিন সময়ে পাশে ছিলেন তাঁর স্বামী দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এবং মেয়ে প্রেরণা। প্রতিদিন ওষুধ খাওয়ানো, মানসিক শক্তি জোগানো, সব দিক সামলেছেন তাঁরাই। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে সম্পূর্ণ ন্যাড়া হয়ে যান এষা। সাজগোজ যাঁর প্রাণ, সেই মানুষটিই তখনও মুখে হাসি ধরে রেখেছেন। এমনকি হাসপাতালের বেডে শুয়ে জন্মদিন পালন করেছেন, সেই হাসিমুখে তোলা ছবিও আজও সমাজ মাধ্যমে আছে। একসময় উইগ কিনলেও পরে স্বেচ্ছায় ন্যাড়া মাথাতেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে দ্বিধা করেননি তিনি।

তাঁর বিশ্বাস ছিল, মন খারাপ করলে শরীর আরও ভেঙে পড়ে। তাই সর্বদা ইতিবাচক চিন্তাই ছিল তাঁর সঙ্গী। অসুস্থ হওয়ার আগে, হাতে ছোটপর্দা এবং বড়পর্দা মিলিয়ে একটার পর একটা কাজ ছিল। সুস্থ হয়ে ফেরার পর আবার ছোট পর্দায় ফিরেছিলেন তিনি। ‘কাজল নদীর জলে’-তে তাঁর অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। যদিও চরিত্র বড় না হলেও, অভিনয়ের গভীরতায় তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের জায়গা। বর্তমানে অভিনয় থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও, প্রেরণার সঙ্গে ভ্লগিং করেন তিনি।

সেই ভিডিওতেও দর্শকরা এষার প্রাণবন্ত উপস্থিতি দেখে মুগ্ধ হন। উল্লেখ্য, অভিনয় জীবনের শুরুটা তাঁর কাছে একেবারেই আকস্মিক ছিল। ১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া এষা তখন শুধুই এক সাধারণ গৃহবধূ। অভিনয় শেখেননি কখনও, কিন্তু ইচ্ছেটা ছিল প্রবল। শ্বশুর বাড়ি ছিল অত্যন্ত আন্তরিক, অল্প বয়সে বিয়ের কারনে তাড়াতাড়ি সন্তান নিতে বারণ করেন তারাই। বিয়ের পাঁচ বছর পরে প্রেরণার জন্ম, মেয়েকে একটি বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে নিয়ে গিয়েই নিজের ইচ্ছা এবং অভিব্যক্তির জোরে প্রযোজকের নজর কাড়েন।

আরও পড়ুনঃ “যারা সমালোচনা করেছে, শিরোনামে আসার জন্যই করেছে!” “সমালোচকদের কখনও পাত্তা দিই না, এটা আমার কাজ আর আমি করবই!”— চন্ডালিকা কান্ডে সমালোচিত হয়েও ঝুঁকতে নারাজ দেবলীনা !

এরপরেই পেয়ে যান প্রথম ধারাবাহিকে সুযোগ—‘সোনার হরিণ’-এর মাধ্যমে ছোট পর্দায় পা রাখেন। পরে বড়পর্দায় দেব, জিৎ, শুভশ্রী, শ্রাবন্তীদের মতো তাবড় তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে বড় পর্দাতেও কাজ করেন। তবে সবটা ছিল না শুধুই সাফল্য। অপমানও সহ্য করতে হয়েছে সহকর্মীদের কাছ থেকে। নিজেই বলেছেন, “অপমান সহ্য করে বাড়ি এসে কেঁদেছি, কিন্তু মুখের উপর কিছু বলিনি। কাউকে কোনদিনও মনে কষ্ট দেবার মত কাজ আমি করি না।” তাঁর এই বিনয় ও আত্মবিশ্বাসই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।