লেখিকা ‘লীনা গঙ্গোপাধ্যায়’ (Leena Ganguly) এর কলমে যেন নতুন মোড় নিচ্ছে বাংলা ধারাবাহিকের জগৎ। স্টার জলসার ‘রোশনাই’তে (Roshnai) তিনি মূলত একই সুতোয় বেঁধেছেন তিনটি আলাদা মানুষের গল্প— গরিমা, আরণ্যক ও রোশনাই। সম্পর্ক, বিশ্বাসভঙ্গ, আত্মপরিচয়ের টানাপোড়েন আর ভালো-মন্দের জটিলতা, সব মিলিয়ে ধারাবাহিকটি ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে দর্শকের মনে, আবার একই সঙ্গে জন্ম দিচ্ছে তীব্র বিতর্কেরও।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি রিল ভিডিয়ো যেন সেই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। সেখানে এক তরুণী দাবি করেন, তিনি তাঁর মায়ের কাছে মার খেয়েছেন আর একটা চোখ কালো হয়ে গেছে, শুধুমাত্র এই কারণে যে তিনি ধারাবাহিকে খলনায়িকা গরিমার চরিত্রকে সমর্থন করেছিলেন! এই ঘটনা নিছক মজার ছলে করা ভিডিয়ো না সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন। তবে সে বিতর্ক থাক, কিন্তু এটুকু স্পষ্ট যে ‘রোশনাই’-এর খলচরিত্র গরিমা দর্শকের মনে প্রবল আলোড়ন তৈরি করেছে।
গরিমার প্রতি এই আবেগের কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করছেন, চরিত্রটি নিছক খলচরিত্র নয়। তার যন্ত্রণার গভীরতা, তার যুক্তির স্পষ্টতা এবং নিজের অবস্থানকে জোরালোভাবে তুলে ধরার ক্ষমতা তাকে আলাদা করেছে আর পাঁচটা খলনায়িকার থেকে। বরং ধারাবাহিকের মূল চরিত্র রোশনাই-ই এখানে এক সময় দিদির জীবনে তৃতীয় মানুষ হয়ে আসে, ফলে দর্শকের সহানুভূতি অনেক সময় সরে যাচ্ছে গরিমার দিকে। বাংলা ধারাবাহিকে এই ধরনের পরিবর্তন খুব একটা দেখা যায় না।
এই প্রসঙ্গে এদিন লেখিকাকে একটি সংবাদ মাধ্যমের তরফে যোগাযোগ করা হলে, লীনা গঙ্গোপাধ্যায় নিজেও জানিয়েছেন, তিনি কখনওই তাঁর খলচরিত্রদের ‘একরৈখিক’ করে লেখেন না। তাঁর কথা,”আমার লেখায় কোনও চরিত্র পুরো কালো বা সাদা নয়, বরং দুটি মিলিয়েই।” তিনি বলেন, তাঁর লেখা খলচরিত্রদের ভিতরে থাকে নানান স্তর, বাস্তব জীবনের প্রতিফলন। তাঁর মতে, চরিত্রের ভেতরে যদি দর্শক মানবিক দ্বন্দ্ব খুঁজে পান, যদি তাঁরা খলচরিত্রকে নিয়েও ভাবতে বাধ্য হন, তবেই সেই চরিত্রসৃষ্টি সফল।
আরও পড়ুনঃ আ’ত্ম’হ’ত্যা’র চেষ্টা, করল মোহনা! আকাশ জানতে পারলো মোহনার সন্তানের বাবা আদৃত! শুভ আদির সমস্ত সত্যি কথা জানতে পেরে কি স্বামীকে ক্ষমা করতে পারবে?
আর খলচরিত্র হয়েও ‘গরিমা’ ঠিক সেই কাজটাই করছে। তাই ‘রোশনাই’ আর পাঁচটা ধারাবাহিকের মতো নায়ক-নায়িকার নিখুঁত প্রেমে আটকে নেই। বরং এখানে প্রত্যেক চরিত্রই ধূসর, জটিল এবং মানবিক। ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষ তৈরি হয়, এই মন্ত্রেই বিশ্বাসী লেখিকা। দর্শকের চিন্তা-ভাবনায় যদি একজন ‘খলচরিত্র’ প্রশ্ন তুলে দেয় ন্যায়ের সংজ্ঞা নিয়ে, তবে সেই ধারাবাহিক নিঃসন্দেহে সময়ের চেয়ে এগিয়ে বলে মনে করেন তিনি।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।