বাংলার চলচ্চিত্র এবং থিয়েটারের স্বর্নযুগের এক প্রতিভাবান অভিনেত্রী তিনি। বর্তমানে মেগা ধারাবাহিকের যুগেও একইভাবে স্বমহিমায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো বিরাজমান তিনি। সেকাল থেকে বর্তমানেও একইভাবে তিনি একইভাবে জয় করেছেন দর্শকদের ভালোবাসা। এখনও একইভাবে বলে চলেছে তার অভিনয়ের সাধনার ধারা। জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত থেকে শুরু করে রবি ঘোষের মতো স্বনামধন্য অভিনেতাদের সংস্পর্শে সম্বৃদ্ধ হয়েছে তার অভিনয় জীবন। তিনি বাংলা রঙ্গমঞ্চের বিশিষ্ট অভিনেত্রী চিত্রা সেন (Chitra Sen)।
১৯৩৪ সালের ৫ই মে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বুকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার পিতার নাম ছিল পাচুগোপাল মন্ডল এবং তার মা ছিলেন আরতি দেবী। কলকাতার দেশবন্ধু কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন অভিনেত্রী। এরপর ১৯৭২ সালে পরিচালক সুশীল মজুমদারের পরিচালিত সিনেমা রাত্রি তপস্যা ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের আঙিনায় পা রেখেছিলেন অভিনেত্রী চিত্রা সেন।
ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের পাশাপাশি নৃত্যের প্রতি অদ্ভুত ভালোলাগা শুরু হয়েছিল তার। বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী বালকৃষ্ণ মেনন এবং শক্তি নাগের কাছ থেকেই মণিপুরী এবং ভরতনাট্যম নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালের মাঝামাঝি সময়তেই নৃত্যের অনুষ্ঠানের কারণেই পোল্যান্ড, চিন, হল্যান্ড, মস্কো, হংকং প্রভৃতি দেশ বিদেশের পরিদর্শন করেছিলেন তিনি। নৃত্যের পাশাপাশি অপরেশ লাহিড়ী, শ্যামল মিত্র, সুধীরলাল চক্রবর্তী কাছ থেকেই গানের তালিম নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৫৮ সালে যৌতুক, ১৯৫৯ সালে পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট এবং ১৯৬১ সালে কালজয়ী স্বনামধন্য পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের কমলগান্ধার সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে উৎপল দত্তের ছাত্র অভিনেতা শ্যামল সেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন অভিনেত্রী। বিয়ের পর দীর্ঘদিন অভিনয় জগৎ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন তিনি। ১৯৮০ দশকে কন্যাদান, উনিশে এপ্রিল, ভয়, হারানের নাথজামাই, দায়বদ্ধ সিনেমায় মাধ্যমে তিনি পুনরায় আত্মপ্রকাশ করেন অভিনয় জগতে। ১৯৮৯ সালে মনোজ মিত্রের অলোকানন্দের পূত্রকন্যা সহ জলছবির মতো জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছিলেন চিত্রা দেবী।
আরো পড়ুন: পরাগের প্রতি কর্তব্য করতে গিয়ে শতদ্রুকে চরম অপমানে বিদ্ধ করল শিমুল! অসহ্য চরিত্র হয়ে উঠছে মনের কথা দেখে কটাক্ষ নেটিজেনদের
এছাড়াও উৎপল দত্তের অপেরা বিবেকযাত্রাতে তার অভিনয় এখনও মনে রেখেছেন দর্শকরা। পুত্র কৌশিক সেনের পরিচালনায় স্বপ্নসন্ধানীতেও অভিনয় করে তাক লাগিয়েছেন দর্শকদের। সীমা মুখোপাধ্যায়ের রঙরূপের সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন তিনি। তবে এখানেই শেষ নয়, সুবর্নলতা, বয়েই গেছে, এক আকাশের নিচে, অন্দরমহল, শ্রীময়ী, মন নিয়ে কাছাকাছি সহ একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। শেষবার তাকে দেখা গেছিল খড়কুটো ধারাবাহিকে। যদিও তার পর বর্তমানে তাকে দেখা যাচ্ছে না কোন ধারাবাহিকে। ২০১০ সালে জলছবি সিনেমায় তার অনবদ্য অভিনয়ের কারণে তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে। ৮৯ বছরের হলেও এখনও তিনি পুত্র কৌশিক ও নাতি রিদ্ধির সঙ্গে সমহিমায় উজ্জ্বল। তার সুস্থ জীবন কামনা করি আমরা।