কেন বদলে দেওয়া হল স্টার থিয়েটারের নাম? নটী বিনোদিনীর গভীর ক্ষতে পরল প্রলেপ, জানেন স্টারের সঙ্গে নটীর ইতিহাস?

কলকাতার (Kolkata) নাট্যজগতে আজও এক কিংবদন্তি নাম নটী বিনোদিনী (Noti binodini)। মাত্র বাইশ বছর বয়সেই নাট্যমঞ্চকে বিদায় জানালেও, তাঁর অবদান মুছে যায়নি। স্টার থিয়েটারের সঙ্গে তাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। এবার সেই নটী বিনোদিনীকেই সম্মান জানিয়ে স্টার থিয়েটারের নাম পরিবর্তন করে ‘বিনোদিনী থিয়েটার’ করার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সন্দেশখালির এক সভায় এই ঘোষণা করেন তিনি। এই সিদ্ধান্তে নাট্যমহল যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনই প্রশ্ন উঠছে বিনোদিনীর প্রতি ইতিহাসের অবিচার নিয়ে।

১৮৮৩ সালে বিডন স্ট্রিটে স্টার থিয়েটারের মঞ্চে প্রথমবার পা রাখেন বিনোদিনী। নাট্যমঞ্চ তৈরিতে তাঁর ভূমিকা ছিল অসামান্য। জনশ্রুতি, গিরিশচন্দ্র ঘোষের অনুরোধে বিনোদিনী নিজ উদ্যোগে অর্থের ব্যবস্থা করেছিলেন। বিত্তশালী গুর্মুখ রায় তাঁর অনুরোধে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন গিরিশচন্দ্রের হাতে। কিন্তু বিনোদিনীর নামে থিয়েটার হলে সমাজ যে তা মেনে নেবে না, তা বুঝেছিলেন নির্মাতারা। ফলে, তাঁর প্রচেষ্টার ফসল হওয়া সত্ত্বেও থিয়েটারটির নাম হয় ‘স্টার থিয়েটার’।

বিনোদিনীর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল এই স্টার থিয়েটার। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের উপস্থিতিতে ‘চৈতন্যলীলা’ নাটকে তাঁর অভিনয় ছিল স্মরণীয়। অথচ, মাত্র ১১ হাজার টাকায় নিজের অংশ বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। যুগের প্রথাগত বিধিনিষেধ এবং সামাজিক প্রতিকূলতা তাঁকে চূড়ান্ত অবিচারের সম্মুখীন করেছিল। নাট্যমঞ্চ ছাড়তে হয় মাত্র ২৩ বছর বয়সে। এরপরেও বিনোদিনী সমাজের কাছে প্রাপ্য সম্মান পাননি।

প্রথমবার নয়, বিনোদিনীর নাম থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি বহুবার উঠেছে। ২০০৪ সালে স্টার থিয়েটার পুনর্নির্মাণের সময় নাট্যপ্রযোজক গণেশ মুখোপাধ্যায় প্রেক্ষাগৃহটির নাম ‘বিনোদিনী থিয়েটার’ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব গুরুত্ব পায়নি। পরবর্তীতে কলকাতা পুরসভা হাতিবাগান স্টার থিয়েটারের দোতলায় ‘নটী বিনোদিনী আর্ট গ্যালারি’ তৈরি করলেও তা যথেষ্ট ছিল না। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে যেন বিনোদিনীর প্রতি ইতিহাসের সেই ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হলো।

আরও পড়ুনঃ “আজকাল সম্পর্ক ভাঙে কারণ কেউ কাউকে সরি বলতে জানে না!” সম্পর্ক ভাঙা প্রসঙ্গে মন্তব্য মানসী সিনহার

তবু প্রশ্ন থেকে যায়, বিনোদিনী কি তাঁর জীবদ্দশায় প্রকৃত সম্মান পেয়েছিলেন? নিজের সবকিছু বাজি রেখে যাঁর প্রচেষ্টায় স্টার থিয়েটার তৈরি হয়েছিল, সেই বিনোদিনী কি প্রতারিত হননি? মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটলেও, বিনোদিনীর জীবনের দুঃখের গল্প নাট্যপ্রেমীদের মনে আজও প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।