বলিউড নামটার মধ্যে যতটা গ্ল্যামার যতটা আলো রয়েছে ততটাই রয়েছে অন্ধকার। অভিনয় পেশার সঙ্গে যুক্ত এমন বহু মানুষ রয়েছেন যাঁরা কোটিপতি হওয়ার লোভে বিভিন্ন সময় নোংরা পথে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেছেন। পা বাড়িয়েছেন ভুল পথে। ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে আপোষ করেছেন অন্ধকারের সঙ্গে।
আর সেই রকমই একজন অভিনেত্রী হলেন শ্বেতা বসু প্রসাদ। একজন শিশু শিল্পী হিসেবে অগাধ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন শ্বেতা। অভাবনীয় সেই সাফল্য। অভিনয় জীবনের শুরুতে দারুণ সাফল্য পেলেও হঠাৎই চোরাগলির অন্ধকারে হারিয়ে যান তিনি। না লড়াইয়ের ময়দান ছাড়েননি তিনি। বরং কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয়ে উজ্জ্বল আলোয় ফিরে এসেছিলেন এই অভিনেত্রী।
এইভাবেও যে ফিরে আসা যায় সেটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন শ্বেতা। ২০০২ সালে প্রথম বারের মতো বড় পর্দায় অভিনয় করেন তিনি। জনপ্রিয় পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজের পরিচালনায় ‘মাকড়ি’ ছবিতে চুন্নি ও মুন্নি, দুই বোনের দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শিশুশিল্পী শ্বেতা প্রসাদ। যদিও পরবর্তীতে নিজের মায়ের পদবী জুড়ে নিয়ে তিনি হন শ্বেতা বসু প্রসাদ।
আর নিজের প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার পান অভিনেত্রী। এই রকম সাফল্য বোধহয় খুব কম অভিনেত্রীর কপালেই জোটে। উড়ানের অবশ্য এখানেই শেষ নয়! ২০০৫ সালে নাগেশ কুকুনুরের ‘ইকবাল’ ছবিতে খাদিজার ভূমিকায় অভিনয় করে করাচি চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সহঅভিনেত্রীর পুরস্কার পান শ্বেতা। এছাড়াও ‘কহানি ঘর ঘর কি’ এবং ‘করিশ্মা কা করিশ্মা’-র মতো তৎকালীন জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল তারকা হয়ে ওঠার স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন অভিনেত্রী।
যদিও পরবর্তীতে পড়াশোনার জন্য অভিনয় থেকে ব্রেক নেন এই অভিনেত্রী। মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন শ্বেতা। সাংবাদিকদের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ শ্রদ্ধা। পরে এই সাংবাদিকদেরই নোংরা প্রশ্ন এবং খবরের বিকৃতির জন্য তাঁদের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হয় অভিনেত্রীর। যদিও ফিল্ম ক্রিটিক হিসেবে এক নামী সংবাদপত্র লেখালেখি করতেন অভিনেত্রী। হিন্দির পাশাপাশি তামিল, তেলুগু ও বাংলা ছবিতেও সফলভাবে অভিনয় তিনি। মা বাঙালি হওয়ায় বাংলা সংস্কৃতির প্রতি অগাধ টান শ্বেতার।
অভিনেত্রীর এই সফল পথ চলা ধাক্কা খায় ২০১৪ সালে। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হায়দরাবাদের একটি হোটেল থেকে যৌ’ন ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করে হায়দরাবাদ পুলিশ। দীর্ঘদিন জেলবন্দী ছিলেন অভিনেত্রী। সেই সময় খবর রটে যে অর্থের লোভেই এই পেশা বেছে নিয়েছেন নাকি অভিনেত্রী।
এই ঘটনার পর অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাঁকে মিথ্যা ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছিল বলে জানা যায়। হায়দরাবাদের আদালত শ্বেতাকে ক্লিন চিট দেয়। মুক্তি পেয়ে তিনি জানান তাঁর স্বীকারোক্তি হিসেবে যা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে ভুয়ো। কারণ তিনি কিছুই জানাননি। যদিও এই ঘটনা ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল শ্বেতাকে। কলঙ্ক লেগেছিল নিজের চরিত্রে, পেশায়। কিন্তু অভিনেত্রীকে যাঁরা চিনতেন তাঁরা বিশ্বাস করেছিলেন শ্বেতা এমন কিছু করতে পারেন না । কটাক্ষ শোনার পাশাপাশি প্রচুর মানুষের ভরসার হাতও নিজের কাঁধে পেয়েছিলেন শ্বেতা।
কলঙ্ক মুছে আবারও সফল অভিনয় জীবনের দিকে পা বাড়ান অভিনেত্রী। একতা কাপুরের ধারাবাহিক ‘চন্দ্র নন্দিনী’তে রজত টোকাসের সঙ্গে তাঁর জুটি ব্যাপক হিট হয়। এই ধারাবাহিক শ্বেতাকে আবারও নতুন করে সাফল্য এনে দেয়। ফিরিয়ে দেয় সেই বিপুল জনপ্রিয়তা। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেত্রীকে। একাধিক সিনেমায়, ওয়েব সিরিজে সফলভাবে অভিনয় করে চলেছেন তিনি। যদিও এরইমাঝে ধাক্কা খেয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। পরিচালক রোহিত মিত্তলের এর সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রেমের পর বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী। যদিও সেই বিবাহিত সম্পর্ক দশ মাসের বেশি টেকেনি। কিন্তু সবকিছু সামলে অভিনয়কে আঁকড়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী শ্বেতা।