আর ডি বর্মন, সুরের জগতের এক অন্যতম নক্ষত্র। অনেকেই মনে করেন বলিউডে তিনি গানের ধারা সম্পূর্ণ ভাবে বদলে দিয়েছেন।তার সুরের মেলবন্ধনে সবকিছুই জনপ্রিয়।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজও তার সুর কণ্ঠ মানুষের মনে প্রাণে জড়িয়ে আছে। ১৯৫০ এর দশকে বলিউডের জগতে তার অভিষেক হয়।সচিন দেব বর্মনের ছেলে হওয়ায় প্রত্যাশার পারদ ছিল গগনচুম্বী, সেই মানুষটাই নিজস্ব দক্ষতায় তৈরি করলেন সুরের এক অন্যতম রাজপ্রাসাদ।আজ ২৭জুন, কিংবদন্তি রাহুল দেব বর্মনের ৮৪তম জন্মদিন।শুধুমাত্র সঙ্গীত পরিচালক নন, গানের জগতের অন্যতম নক্ষত্র হয়ে ওঠেন।
রাহুল দেব বর্মনকে ‘পঞ্চম’ নামেও অনেকেই চেনেন। এই নামটি তাকে দিয়েছিলেন অভিনেতা অশোক কুমার।মাত্র ৯ বছর বয়সে গান তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেন তিনি।৬/১ সাউথ এন্ড পার্ক, কলকাতা- ২৯,এই ঠিকানায় তাঁর বেড়ে ওঠা। একসময় এখানেই সপরিবারে থাকতেন শচীন দেব বর্মন। আর এখানেই বেড়ে ওঠা টুবলুর।
যাবতীয় দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি চলছিল পড়াশোনা, সঙ্গে সঙ্গীত শিক্ষা, তবলা, সরোদের তালিম। শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিল ব্রজেন বিশ্বাস, উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের মতো ব্যক্তিদের। শুধুমাত্র গান না, সঙ্গীতের সুর তাল ছন্দ যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে তৈরি করে গেছেন একের পর এক গান।নিজেকে তুলে ধরেছেন সকলের থেকে আলাদা ভাবে।
‘হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা’ গানে হারমোনিকা বাজিয়ে নিদর্শন রাখলেন তিনি। গানটি কম্পোজ করেন শচীন দেব বর্মন।এরপরে ‘ও মেরে সোনা রে সোনা রে’ ও ‘তুমনে মুঝে দেখা’ যা দিয়ে পঞ্চম মিউজিক ডিরেক্টর হিসাবে প্রথমবারের জন্য সাফল্যের সিঁড়িতে পা রাখেন।
এই কিংবদন্তির হাত ধরেই ভারতের যন্ত্র সঙ্গীতে আমরা শুনতে পাই চেলো ও বাজ গিটারের সুর।পশ্চিমি, লাতিন, আরবি ঘরানার মিউজিক ব্যবহার করার জন্য বিদেশ থেকে বহু বাদ্যযন্ত্র আনিয়েছিলেন তিনি। ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিলকো’ গানে কাঁচের গ্লাসের সাথে চামচ ব্যবহার করে অসাধারণ মিউজিক তৈরি করেন।
শুধুমাত্র বিদেশি সঙ্গীত না,শাস্ত্রীয় সংগীত নিয়েও বেশ কিছু কাজকর্ম করেছিলেন। পাশে পেয়েছিলেন গুলজার সাহেবের লেখা আর কিশোর কুমারের গলা। আর ডি, গুলজার আর কিশোর কম্বিনেশন সমস্ত গান অসাধারণ।
কিতাব ছবিতে ‘মাস্টারজি কি আ গয়ি চিঠ্ঠি’ গানে ডেস্ক বাজিয়ে রেকর্ডিং করেন পঞ্চম। একটি গানের সুর তৈরির সময় খালি বোতলে ফুঁ দিয়ে সুর তৈরি করেন। জীবনের বিভিন্ন ঘটনা তার সঙ্গীতে ফুটে উঠেছে।
তার স্ত্রী রিতা প্যাটেল তার গানের ভক্ত ছিলেন।দার্জিলিংয়ে প্রথম আলাপ তারপরে বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে সিনেমা দেখতে যান তিনি। ১৯৬৬ সালে বিয়ে করেন। যদিও পাঁচ বছরের মধ্যেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
বিবাহ-বিচ্ছেদের পরের বছর ‘পরিচয়’ ছবির জন্য ‘মুসাফির হুঁ ইয়ারো’ গানটি লিখেছিলেন পঞ্চম। সনম তেরি কসম সিনেমার রিহার্সাল সময় নিশা নামে একজন শিল্পী আসেন। পঞ্চম মজা করে তাকে ‘নিশা আহা হা আহা হা’ বলে ডাকেন পরে সেখান থেকেই গান তৈরি করে ফেলেন তিনি।
অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। ভূত বাংলা ও প্যায়ার কা মৌসম সিনেমায় তাকে দেখা যায়। বচনা অ্যায় হাসিনো, দম মারো দম, গুলাবি আঁখে জো তেরি দেখির মতো গান বর্তমানে সঙ্গীতের এক অন্যতম ভান্ডার। প্রায় ৩৩১ টি সিনেমার জন্য গান তৈরি করেছেন এই কিংবদন্তি।
আজ তার জন্মদিনে তার সুরেই মেতে রয়েছে গোটা দেশ যার ঝলক ফুটে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায়।