বাংলার সঙ্গীত জগতে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আর তীক্ষ্ণ ভাষায় সমাজ-রাজনীতি নিয়ে মন্তব্যের জন্য বরাবরই পরিচিত ‘নচিকেতা চক্রবর্তী’ (Nachiketa Chakraborty)। এবারও সেই ধারার বাইরে যাননি তিনি, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি এবার মায়ের জায়গা দিলেন! জানালেন, আগের সরকার মানুষ বলে ভাবতেন না তাদের। তবে, ঘটনাটা ঠিক কী? সম্প্রতি এক দুর্গাপুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানেই এমন মন্তব্য করলেন, যা আবারও আলোচনায় এনেছে শিল্পী-রাজনীতির সম্পর্ক।
সেখানেই নাকি মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ভাল খাওয়া-দাওয়া করে শরীরের যত্ন নিতে বলেন। রোগা হওয়া নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি। যদিও নচিকেতা নিজেই স্বীকার করেছেন, খাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ না থাকায় অনেক সময় অবহেলাই করেন শরীরের দিকে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে তিনি নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বিশেষ করে ফল, কিউই এবং ব্লু-বেরি বেশি খেতে বলেছেন। গায়ক নিরামিষাশী, তাই প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ওপর নজর দিতে বলেছেন মমতা।
সেই কথাই হেসে হেসে শোনালেন নচিকেতা। তবে শুধু খাবার নয়, মুখ্যমন্ত্রীর শরীরচর্চার প্রতি বিশেষ প্রশংসাও করেন গায়ক। তিনি জানান, প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার হাঁটা কোনও সাধারণ বিষয় নয়। এত কাজের চাপ সামলেও যে এভাবে সুস্থ থাকা যায়, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনযাপন থেকেই শেখার মতো। তাঁর ভাষায়, “বাইরে থেকে রোগা। কিন্তু ভিতর থেকে দারোগা!” প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় থেকেই মমতার সঙ্গে কাছাকাছি থাকার অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিয়েছেন নচিকেতা।
তখন থেকেই তিনি নাকি লক্ষ্য করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী খুবই স্বল্পাহারী হলেও কিন্তু ভেতরে ভেতরে অদম্য শক্তির উৎস। গায়কের মতে, তিনি যেন শক্তিকেন্দ্র, একাই অনেকের কাজ সামলে নিতে পারেন। আর সেই গুণই সাধারণ মানুষকে কাছে টেনে আনার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে আলাদা করে দেয়। মাত্র কয়েক মিনিটেই মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁকে অন্য রাজনীতিকদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। সবশেষে নচিকেতা মমতার প্রতি নিজের পক্ষপাতিত্বের কথা অকপটে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওঁর মধ্যে মাতৃত্বসুলভ একটা ব্যাপার আছে।
আরও পড়ুনঃ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহধর্মিণী, গুণী সঙ্গীতশিল্পী নীলিমা মুখোপাধ্যায় চলে গেলেন নীরবেই! স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছেন যেমন, ঠিক তেমনই নিজেও ছিলেন ‘সুরশ্রী’! বাংলা সংস্কৃতিকে তিনি দিয়েছেন অনন্য সব উপহার, জানলে অবাক হবেন!
আমরা সরাসরি রাজনীতির মানুষ না। কিন্তু তাও আমাদের উনি সম্মান দিয়েছেন। তাই ওঁর প্রতি আমি তো বাবা-মায়ের মতোই পক্ষপাতী। আগের সরকার আমাদের মানুষ ভাবতো না, কোনদিনও সম্মান দেয়নি। উনি সেটা ভাবেন, শিল্পকে নিয়ে ওনার ভাবনাও আলাদা।” আগের সরকার যেখানে শিল্পীদের শুধুই জনসমাগম টানার উপায় হিসেবে দেখত, সেখানে মমতার কাছ থেকে শিল্পীরা পেয়েছেন সম্মান। মমতার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা তাই শুধু রাজনৈতিক কারণে নয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে, বলে দাবি তাঁর।