পেটে খাবার নেই, পরনে কাপড় নেই, দেশ ছেড়ে আসার পর আর ভালো থাকা হয়নি তাঁর, যন্ত্রণার আর এক নাম ঋত্বিক ঘটক
ভাবো ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো…। যাঁর কাছে ‘ভাবা’ একটি অনুশীলন। বিশ্বযুদ্ধ, আন্দোলন, দুর্ভিক্ষ, বিক্ষোভের কলকাতা, যাঁর ভাবনায় একটি আস্ত এলডোরাডো। একদিকে উত্তেজক, অন্যদিকে উদ্বেগের শহর। তরুণ্যের শহর, ভালোবাসার শহর। তাঁর সব ভাবনার রসদ রেখে গিয়েছেন ছবির মধ্যে। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী পরিচালক ঋত্বিক ঘটক (Ritwick Ghatak)। আজ ৪ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন।
দেশভাগের যন্ত্রনা নিয়ে যখন কলকাতায় পা রেখেছিলেন তখন তাঁর বয়স মাত্র সতেরো। খাবার নেই । পরনের কাপড় নেই ৷ এই যন্ত্রনা মেনে নিতে পারেননি তিনি। অশোক মিত্রের মতো ‘কবিতা থেকে মিছিলে’-ও যেমন তিনি সঙ্গী হয়েছেন, তেমনই মিছিলকেও তুলে এনেছেন তাঁর কলমে ৷ হাজারে প্রেমিকাকে অপ্রেমিকা বানানোর মাঝে তৈরি হয়েছে ‘সুবর্ণরেখা’-র মতো ছবি ৷ যা ধাক্কা দিয়ে খসিয়ে দিতে চেয়েছে সভ্যতার নিটোল মুখোশ ৷
তাঁর মৃত্যুর পর শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, “তুমি গেছ স্পর্ধা গেছে বিনয় এসেছে বাংলায় ৷” দেশভাগের যন্ত্রনা বুকে বিঁধে থাকত ঋত্বিকের। যন্ত্রনাই জন্ম দিয়েছিল ‘নাগরিক’-এর। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল এই সিনেমা। যদিও শুটিং হয়েছিল তারও অনেক আগে ১৯৫২ নাগাদ। এছাড়াও ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘কোমল গান্ধার’ আরও কত কি।
আরও পড়ুন: ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী দুই শালিকের টিআরপি রেটিং! তা সত্ত্বেও জলসা প্রাইম স্লট দিচ্ছে না দুই শালিককে! খ’চে লাল দর্শকরা
১৯৭৭ সালে মুক্তি পায় তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা ছবি ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ ৷ যেখানে ঋত্বিক তাঁর দর্শন আর ভাবনাকে সুন্দরভাবে উজার করে দেন রূপোলি পর্দায়। এই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন ঋত্বিক। এছাড়াও ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবির জন্য সেরা পরিচালক হিসাবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন পরিচালক। পেয়েছেন পদ্মশ্রীসহ একাধিক সম্মান। সব সবটাই মৃত্যুর পর। তাই ঋত্বিকের যন্ত্রণার আর এক নাম ঋত্বিক। যে যন্ত্রণার কাঁটাতার বিছিয়ে রয়েছে সীমান্ত জুড়ে, তাঁর সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গি হয়ে জড়িয়ে আছেন ঋত্বিক ঘটকও ৷