৩৪ বছরের অভিনয় জীবনে আজ অন্ধকার! কর্মহীন ‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’ খ্যাত অরুণ সাহা, অর্থকষ্টে বিধ্বস্ত অভিনেতা

টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি একসময় ছিল বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। দর্শকরা টিভি পর্দায় চোখ রেখেই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতেন। কিন্তু আজ সেই ইন্ডাস্ট্রি ভুগছে চরম সংকটে। কাজের অভাব, বাজেট কমে যাওয়া, এবং সিনিয়র শিল্পীদের গুরুত্ব কমে যাওয়ায় ইন্ডাস্ট্রি ক্রমেই হারাচ্ছে তার গৌরব। এর জেরে বহু শিল্পী আর্থিক সমস্যায় পড়ছেন, বাধ্য হচ্ছেন বিকল্প পেশা বেছে নিতে। এমনই এক মর্মস্পর্শী উদাহরণ হিসেবে বর্তমান সময়ের কিছু তারকারা।

অভিনেতা অরুণ সাহা (Arun Saha), যিনি ১৯৯০ সালে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, ছোট পর্দার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা। ‘বামাক্ষ্যাপা’, ‘খুকুমণি হোম ডেলিভারি’, ‘ভজ গোবিন্দ’-এর মতো সিরিয়ালে তার অভিনয় দর্শকদের মন ছুঁয়েছিল। ৪০টিরও বেশি মেগা সিরিয়াল, ৩৫টি টেলিফিল্ম এবং ৬টি ফিচার ফিল্মে কাজ করেছেন তিনি। এত অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও, আজ তার হাতে কোনও কাজ নেই। গত ছ’মাস ধরে একটিও কাজ পাননি তিনি। অরুণের কথায়, “এখন অভিনয়ের মাধ্যমে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। অভিনয়ই আমার একমাত্র পেশা ছিল। কিন্তু আজ সেটাও আর আমার পাশে নেই।”

Arun Saha

৩৪ বছরের অভিনয়জীবনে আজ কর্মহীন। অর্থকষ্টে দিন কাটছে অরুণ সাহার। সামান্য আয়ের জন্য তিনি একটি এনজিওতে কিছু শিশুদের নাটক শেখান। কিন্তু তাতে সংসার চালানো সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে হোম কিচেন বা ক্লাউড কিচেন খোলার কথা ভাবছেন তিনি। অরুণ বলেন, “সিনিয়র শিল্পীদের কোনও গুরুত্ব নেই ইন্ডাস্ট্রিতে। এত বছর কাজ করার পরও আজ পারিশ্রমিক পেতে গেলে সমঝোতা করতে হয়। আর অনেক সময় তাতেও কাজ মেলে না। এই ইন্ডাস্ট্রি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে অভিজ্ঞতার কোনও দাম নেই। সিনিয়র চরিত্রে আজ ৫০-৫৫ বছরের অভিনেতাদের নেওয়া হচ্ছে। আমাদের মতো সিনিয়ররা যেন একপ্রকার অবাঞ্ছিত হয়ে পড়েছি।”

অরুণ সাহার পরিস্থিতি একমাত্র নয়। সম্প্রতি পরিচালক অয়ন সেনগুপ্তের জীবনেও দেখা গেছে একই চিত্র। একসময় ‘কে আপন কে পর’, ‘দীপ জ্বেলে যাই’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিক পরিচালনা করেছিলেন তিনি। কাজের অভাবে বাধ্য হয়ে তিনি রাস্তায় খাবারের দোকান খুলেছেন। তার কথায়, “দীর্ঘ দু’বছর কোনও কাজ নেই। সংসার চালানোর জন্য ‘পেটুক’ নামে রাস্তায় একটি দোকান খুলেছি। এতদিন যে ইন্ডাস্ট্রির জন্য পরিশ্রম করলাম, আজ সেই ইন্ডাস্ট্রি আমাদের প্রয়োজন মনে করছে না।” অভিনেতা অনিন্দ্য চক্রবর্তীও একই সমস্যায় পড়েছেন। সাত মাস ধরে কোনও কাজ নেই তার। সংসার চালানোই কঠিন হয়ে উঠেছে। এমনকি তিনি বলেছেন, “আমাদের পেশার প্রতি যে সম্মান একসময় ছিল, তা আজ সম্পূর্ণ উধাও। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।”

আরও পড়ুনঃ ‘এখন‌ও মা-বাবার ক্যাচাল মিটল না, মেয়েদের ছেলে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেল’, ‘দয়া করে বন্ধ হোক’, অনুরাগের ছোঁয়ার প্রোমো দেখে কটাক্ষ নেটিজেনদের

অরুণ সাহার জীবনের এই মুহূর্ত শুধু তার একার নয়, বরং ইন্ডাস্ট্রির অনেক প্রবীণ শিল্পীর জীবনগাথা। তারা বছরের পর বছর ইন্ডাস্ট্রির জন্য নিজেদের নিংড়ে দিয়েছেন, কিন্তু আজ তারা যেন ব্রাত্য। ইন্ডাস্ট্রির এই অবস্থা কেবল তাদের আর্থিক সংকট নয়, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণ। অরুণ সাহা বলেন, “এই পরিস্থিতি শুধু আমার একার নয়। অনেকেই এই সমস্যার মুখোমুখি। আমাদের জন্য কোনও আশার আলো নেই।”টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির এই অস্থিরতা কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা সময়ই বলবে। তবে যত দিন যাচ্ছে, এই পরিস্থিতি আরও গভীর সংকটের দিকে এগোচ্ছে। এটি শুধুমাত্র একটি পেশার সমস্যা নয়, বরং বহু মানুষের স্বপ্ন ভাঙার করুণ চিত্র।

You cannot copy content of this page