‘জয় আমার জীবনের প্রথম পুরুষ, প্রথম প্রেম! কী করে ভুলে যাই বলুন তো?’— কান্নায় ভেঙে পড়লেন জয় ব্যানার্জীর প্রথম স্ত্রী অনন্যা এই পুজোয় তাঁর জীবনে আর নেই আনন্দের আলো, শুধু রয়ে গেল শূন্যতা আর জয়ের স্মৃতি!

পুজোর মরসুম মানেই উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর আলোর ঝলকানি। কিন্তু কারও কারও কাছে এই উৎসবের দিনগুলো হয়ে ওঠে কেবলই বেদনার স্মৃতি। ঠিক যেমনটা হলো অভিনেতা-রাজনীতিক জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম স্ত্রীর কাছে। দীর্ঘ অসুস্থতার লড়াই শেষে সম্প্রতি চলে গেছেন জয়। আর সেই খবর সামনে আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। জানালেন—“জয় আমার জীবনের প্রথম পুরুষ, প্রথম প্রেম। কী করে ভুলে যাই বলুন তো?”

জয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় কলেজ জীবনে। উত্তর কলকাতার রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়া এক তরুণী মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের রঙিন ব্যক্তিত্বে। সেসময় অভিনয় থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে আসছিলেন জয়। জনপ্রিয়তা অনেকটা কমে গিয়েছিল। তবু তাঁর হইহই করে বাঁচার ধরনই টেনেছিল স্ত্রীকে। তিনি জানান, মা ছোটবেলা থেকেই জয় অভিনীত ছবি ও গান দেখতে ভালোবাসতেন। সেখান থেকেই তাঁর মনে গেঁথে গিয়েছিল অভিনেতার ব্যক্তিত্ব। জাতীয় পুরস্কার পাওয়া অভিনেতা হয়েও সাধারণভাবে বাঁচার সহজাত প্রবণতা তাঁকে করে তুলেছিল আলাদা।

তবে জয় শুধু অভিনেতাই ছিলেন না, জীবনের এক পর্যায়ে রাজনীতিতেও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০০৯ থেকে ২০১১— বাংলা রাজনীতির উত্তাল সময়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে প্রচারে ঝড় তোলেন জয়। বক্তৃতায় তিনি যেমন সরাসরি ও চাঁছাছোলা ছিলেন, তেমনই এর ফলে বারবার বিতর্কে জড়াতেনও। প্রথম স্ত্রী জানান, কখনও মনে হতো যদি শুধুই অভিনয়ে মন দিতেন, তবে বাংলা সিনেমা আরও অনেক ভালো ছবি পেতে পারত। নবেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ‘চপার’ ছবিতে তাঁর অভিনয়ই এনে দিয়েছিল জাতীয় সম্মান। কিন্তু পরের কয়েকটি ব্যর্থতা তাঁকে ধীরে ধীরে ভেঙে দেয়।

অভিনেতা হিসেবে একসময় জয় ছিলেন সুখেন দাস বা অঞ্জন চৌধুরীর সমকক্ষ। অথচ ‘অনন্যা’ ছবির ব্যর্থতার পরই ধীরে ধীরে অভিনয় থেকে দূরে সরে যান। কিশোরকুমারের মৃত্যুর পর গান নিয়েও তাঁর উৎসাহ অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। জয় আক্ষেপ করে বলতেন—“আর আমার গান কে গাইবে?” সময় যত গড়িয়েছে, যোগাযোগও কমতে থাকে তাঁর সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির। অনেক সময় ফোন ধরতেন না পরিচিতরা। সেই দুঃখ তিনি ভাগ করতেন প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গেই। বিচ্ছেদের পরেও তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ দেবশ্রী রায়ের বিপরীতে অভিষেক থেকে ‘মিলন তিথি’, ‘সিঁথির সিঁদুর’ ও ‘ছোট সাহেব’-এর সফল প্রয়াত অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়! কেমন ছিল তার টলিউডে অভিনয় জীবন? বিনোদন জগত থেকে রাজনীতিতে কিভাবে প্রবেশ করলেন তিনি?

আজ এই মানুষটি আর নেই। প্রথম স্ত্রী জানান, “আমি নেতা বা অভিনেতা জয় নয়, মানুষ জয়কে চিনি। ভীষণ রঙিন, স্বাধীনচেতা মানুষ ছিল। বড়লোক ঘরের ছেলে হয়েও ভীষণ মাটির মানুষ। মা-বাবাকে ভীষণ ভালোবাসত। আজ ও নেই, তবু মনে হচ্ছে কোথাও না কোথাও আমার জীবনেও থেকে গেছে।” আবেগভরা কণ্ঠে তিনি আরও বলেন—“কর্পূর উবে গেলেও সুগন্ধ থেকে যায়। জয়ও তেমনই থেকে যাবে আমার কাছে। জন্মদিন ছিল ২৫ মে, চলে গেল ২৫ অগস্ট। অদ্ভুত মিল। আজ এই বিদায়টাই হয়তো ওর প্রাপ্য।”