বাংলা ছবির পর্দায় এমন অনেক মুখ আছে, যাদের অভিনয় দর্শক বারবার দেখেছেন, মনে রেখেছেন চরিত্রকে—কিন্তু নামটি রয়ে গেছে অচেনা। ক্যামেরার আড়ালে থেকে যাওয়া সেইসব শিল্পীদের গল্প খুব কমই উঠে আসে আলোচনায়। ঠিক তেমনই এক নাম নিমাই ঘোষ। উত্তম-সুচিত্রার যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলা ছবির নানা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিনি থেকেছেন, অথচ আজ তাঁর জীবন কাটছে নীরব অভাবে, লোকচক্ষুর আড়ালেই।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ২০০-র বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন নিমাই ঘোষ। ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’, ‘বব বিশ্বাস’, ‘তিরন্দাজ শবর’—এই ছবিগুলির চরিত্র মনে পড়লেই চোখে ভাসে তাঁর মুখ। কাজ করেছেন মৃণাল সেন, সন্দীপ রায়, বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকদের সঙ্গে। টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘জন্মভূমি’-তেও তাঁর অভিনয় আজও দর্শকের মনে রয়ে গেছে। তবু সেই শিল্পী আজ প্রায় বিস্মৃত।
বহু ছবিতে কাজ করেও নিয়মিত পারিশ্রমিক পাননি তিনি। এমন অভিযোগ বহুদিনের। কাজ শেষে টাকা না পাওয়া, কিংবা “পরে দেওয়া হবে” বলে এড়িয়ে যাওয়া—এই অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে নতুন নয়। শুধু সিনেমাই নয়, অভিনয়ের পাশাপাশি লেখা কবিতার বই প্রকাশ পেলেও রয়্যালটির টাকা মেলেনি বলেই জানা যাচ্ছে। ফলে আয়ের পথ ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে এসেছে।
আজ এক সরকারি আবাসনের ছোট্ট ঘরে দিন কাটছে বর্ষীয়ান এই অভিনেতার। আলো-বাতাস কম, কাজের সুযোগও প্রায় নেই বললেই চলে। নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া চালানোই অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। দারিদ্রের সঙ্গে প্রতিদিন লড়াই করেই কাটছে তাঁর দিন। অথচ যাঁর অভিনয় একসময় বাংলা সিনেমার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, তাঁকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির তেমন কোনো খোঁজখবর নেই।
আরও পড়ুনঃ “ইধিকা তো সুপারস্টার…বাংলার লেডি স্টার!” ‘প্রজাপতি ২’ ট্রেলার লঞ্চে দেব, ইধিকাকে দিলেন নতুন পরিচয়! হঠাৎ শুভশ্রীর উপাধি কেড়ে, কেন অন্য অভিনেত্রীকে দিতে চাইলেন মেগাস্টার? শুরু নতুন বিতর্ক!
নিমাই ঘোষ আজও অভিনয় আর সৃষ্টির মধ্যেই নিজেকে খুঁজে ফেরেন। কবিতার বই ‘পথিক দ্বারাও’-তে ধরা পড়েছে তাঁর অন্য এক সত্তা। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—শুধু চরিত্র মনে রাখলেই কি শিল্পীর দায় শেষ? যাঁরা সারাজীবন পর্দার আড়ালে থেকে আমাদের বিনোদন দিয়ে গেছেন, তাঁদের জন্য কি সমাজের, ইন্ডাস্ট্রির কোনো দায়িত্ব নেই? নিমাই ঘোষের জীবন আজ সেই কঠিন প্রশ্নই ছুড়ে দিচ্ছে আমাদের দিকে।






