“ছেলেটা স্পেশাল চাইল্ড, তাও কখনও আলাদা চোখে দেখিনি বরং ও-ই আমার সাহস!” “মাত্র তিন দিন বয়স থেকেই অপারেশন শুরু হয়েছে…ওর ডান হাত অকেজো, নিজেই হাঁটা শিখেছে!”— খলনায়কের মুখোশের আড়ালে সাগ্নিক একজন লড়াকু বাবা! জানুন অভিনেতার অজানা জীবনযুদ্ধ!

টলিউডের জনপ্রিয় মুখ ‘সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়’ (Sagnik Chatterjee), যিনি খলনায়কের চরিত্রে দর্শকদের ঘৃণা পেয়েছেন, আবার চরিত্রাভিনেতা হিসেবে ভালোবাসাও জয় করেছেন। যাঁরা সাগ্নিককে কাছ থেকে চেনেন, তাঁরা জানেন সহকর্মীদের প্রতি তাঁর সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে গড়ে ওঠা আন্তরিকতাই তাঁর মানবিকতার প্রমাণ। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে মিশিয়ে দেওয়ার যে অসাধারণ দক্ষতা তাঁর আছে, সেটাই তাঁকে টলিউডের একজন ব্যতিক্রমী অভিনেতায় পরিণত করেছে।

ব্যক্তিগত জীবনে এখন স্থিতি এলেও, অতীতে বহু ঝড় একাই সামলেছেন। মেয়েকে যেমন সফলভাবে মানুষ করে বিদেশে পাঠিয়েছেন, তেমনই ছেলের বাবা হিসেবেও তিনি খুব গর্বিত। অভিনেতার ছেলে একজন ‘স্পেশাল চাইল্ড’ (Special Child) বা বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন শিশু। অভিনয়ের ক্ষেত্রে যেমন নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে বারবার, বাস্তব জীবনেও বাবা হিসেবে সংগ্রামী চরিত্রের থেকে কিছু কম নন তিনি। এদিন এক সাক্ষাৎকারে আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি বললেন, “আমি ছেলে মেয়েকে জন্ম দিয়েছি, মানুষ করা অনেক পরের কথা। আগে তাদের ঠিক করে বড় করতে হবে।

মানুষ করতে পারলাম কিনা, সেটা বড় হয়ে তারাই বলবে। অন্যান্যদের সঙ্গে তাদের আচার-ব্যবহারই বলে দেবে যে তারা ভালো মানুষ হয়ছে কিনা। আমার প্রথম পক্ষের এক ছেলে আর এক মেয়ে, এটা সবাই কমবেশি জানে। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, ছেলেটা স্পেশাল চাইল্ড। যখন আমার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তখন ওর মাত্র চার বছর বয়স। জন্ম থেকেই ওকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। যখন জন্মেছিল একদম নীল রঙের, হৃদযন্ত্র ঠিক করে কাজ করত না। ওর যে সমস্যাটা ছিল ওটার নাম ‘টেট্রলজি অফ ফ্যালট’ (Tetralogy of Fallot)।

মূলত চারটে জিনিস এক সঙ্গে হলে হয়। একদিকে হার্টে ব্লক ছিল, দুটো ফুটো ছিল, ইত্যাদি। সেই অবস্থা থেকে ওকে বাঁচিয়ে আনা সহজ ছিল না। মাত্র তিনি দিন বয়স থেকে ওর অপরেশন শুরু হয়েছে, যেটা তিন বছর পর্যন্ত চলেছে। ওই সময় যেহেতু আমার বিচ্ছেদ হয়, আইন অনুযায়ী আমি সন্তানের কাস্টডি পেতাম না। বাবারা সাত বছর পর্যন্ত পায় না, কিন্তু আমার প্রাক্তন স্ত্রী প্রেমের সম্পর্কে জড়াতেই দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। আমায় বলেছিল সন্তানদের মানুষ করতে পারব না, কিন্তু আজ সে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ “বাবার মতো চরিত্র বাস্তবে খুব কম দেখেছি…যুধিষ্ঠির, এক মুহূর্তেও মিথ্যে বলেন না!” “ওনার সঙ্গে অভিনয় মানে একটা স্কুলে পড়া, এই ছবিটা আমাদের কাছে স্পেশাল!”— ১৬ বছর পর বাবা রঞ্জিত মল্লিকের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা ভাগ করলেন মেয়ে কোয়েল!

২০১৮ তে মেয়ে পিএইচডি করতে ফ্রান্সে গেল। ছেলের কথা যদি বলি, ডান হাতটা অকেজো তাও আমি দেখতাম ও নিজে ঠিক করে হাঁটতে না পারলেও অন্যদের নকল করে সব শিখে নিচ্ছে। তাই কোনদিনও স্পেশাল স্কুলে ভর্তি করিনি, চাইতাম আশেপাশে ও সুস্থ মানুষদের দেখে সেটাই শিখবে। কিন্তু সুস্থ মানুষদের কাছেই ও মানসিক হেনস্তার শিকার হয়। শেষে ওর মতো বাচ্চাদের স্কুলে ওকে ভর্তি করি। এরপর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সবই করেছে। এখন গান-বাজনা নিয়েই ভালো আছে।” বর্তমানে অভিনেতা দ্বিতীয়বার সংসার পেতেছেন। অবশেষে সুখের মুখ দেখছেন।