দীর্ঘ ১৬ বছর পর রঞ্জিত মল্লিক (Ranjit Mallick) ও কোয়েল মল্লিকের (Koel Mallick) একসঙ্গে পর্দায় ফেরা নিঃসন্দেহে বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের জন্য একটা বিশেষ মুহূর্ত। এবারের দীপাবলিতে মুক্তি পেতে চলা ‘স্বার্থপর’ (Sharthopor) ছবিতে তাঁদের দেখা যাবে একসঙ্গে, কিন্তু এবার একেবারে নতুন ধরনের সম্পর্কের সমীকরণে। ছবিতে কোয়েলের বাবার চরিত্রে রঞ্জিত মল্লিক নন, বরং তিনি এখানে এক ‘ফ্রেন্ড, ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড’, যে নীরবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে পাশে দাঁড়ান। এই সম্পর্কের জটিলতা ও আন্তরিকতা এক অন্য আবহ তৈরি করেছে গল্পে।
ছবিটির মূল কেন্দ্রবিন্দু দাদা-বোনের সম্পর্ক। একদিকে কৌশিক সেনের চরিত্রে দেখা যাবে এক দাদাকে, অন্যদিকে কোয়েল সেই বোন, যে আজকের সময়ের প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের জট ছাড়াতে চায়। এই সম্পর্কে রক্তের টান যেমন আছে, তেমনি রয়েছে মতভেদ ও দূরত্ব। পরিচালক অন্নপূর্ণা বসু এবং প্রযোজক নিসপাল সিংহ রানের এই প্রচেষ্টা যে একটা পরিচিত পারিবারিক সমস্য— সম্পত্তি নিয়ে বিবাদকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখাতে চেয়েছে, তা ট্রেলারেই স্পষ্ট। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ছবিতে আদালতের আবহ।
কারণ গল্পের একটা বড় অংশ আদালতকে ঘিরে, যেখানে আইনজীবীর চরিত্রে রঞ্জিত মল্লিক, নাম তার জি.কে লাহা, যাকে ‘যুধিষ্ঠির’ বলেও ডাকে অনেকে। একজন এমন সত্যবাদী মানুষ, যিনি পরিস্থিতির চাপে পড়েও মিথ্যে বলতে পারেন না। কোয়েল নিজেই বলছেন, বাবার সঙ্গে এত বছর পর কাজ করতে গিয়ে তাঁকে একদিকে যেমন অভিনয়দক্ষতায় সমান হতে হয়েছে। অভিনেত্রীর কথায়, “আমার বাবা অত্যন্ত একজন নিষ্ঠাবান অভিনেতা, সেটে ঢুকে গেলে উনি অভিনয় ছাড়া কিছুই চেনেন না।
অবশ্যই আজ থেকে ১৬ বছর আগে যেমন ছিলাম এখন অনেকটাই পরিণত হয়েছি। আমিও চেষ্টা করেছি যাতে ক্যামেরা অন হলে চরিত্রের মধ্যে ঢুকতে পারি। বাবার বয়স হয়েছে, শরীর একটু ক্লান্ত হয়ে যায়। সেই দিক থেকে আমায় একটু খেয়াল রাখতে হয়েছে যেন খাওয়ার আর বিশ্রামটা ঠিক সময় পায়। যেহেতু উনি আইনজীবি আবার আদালত ঘিরেই অনেকটা গল্প আর সেখানে তো প্রাত্যহিক আলাপচারিতার মতো কথা চলে না। সেখানে পাতার পর পাতা সংলাপ বলতে হয়েছে বাবাকে।
আমাকেও এমন ব্যাবহার করতে হয়েছে চরিত্রের খাতিরে যেন ঐ মানুষটা আমার অচেনা। সমাজের অনেক সমস্যা নিয়েই ছবি হয়েছে আর হচ্ছে, কিন্তু এই যে প্রতিটা ঘরে ঘরে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, এটার উপর ছবি হয়নি। আমাকে ছবির ট্রেলার দেখে অনেকেই বলেছেন যে, এটা যেন তাঁদেরই বাড়ির গল্প বা আমার চরিত্রটা একদম তাদের মতোই, একটা সার্থকতা পেয়েছি। আসলে চলচ্চিত্র তো একটা পর্যায় সমাজের আয়না।” এই যে সম্পত্তি নিয়ে পরিবারে ফাটল ধরছে, ভাই-বোনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে– এই বাস্তবতাকে সামনে এনে ‘স্বার্থপর’ একটা সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ জি বাংলার টিআরপি শাসন অব্যাহত! শীর্ষে ‘পরিণীতা’, বাজিমাত করল ‘জোয়ার ভাঁটা’! নজর কাড়ল ‘ও মোর দরদিয়া’, ‘পরশুরাম’ কি ক্রমেই হারাচ্ছে নিজের গতি! সেরা পাঁচে এবার কে কোথায়?
আমাদের চেনা সমস্যাকে পর্দায় তুলে ধরলেও ছবিটি আবেগে ভরপুর নয়, বরং বাস্তব আর যুক্তির ভারসাম্যে দাঁড়িয়ে আছে। এত বছর বাদে বাবার সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নেওয়া কোয়েলের জন্য যেমন আবেগের, তেমনি চ্যালেঞ্জেরও ছিল। অভিনেত্রী নিজেই জানিয়েছেন, তিনি ক্যামেরা অন হতেই চরিত্রে ঢুকে পড়তে, আর কাট বললেই আবার বাবার মেয়েতে ফিরে যেতেন। রঞ্জিত মল্লিকের মতো অভিজ্ঞ অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় মানে একটা স্কুলে পড়ার মতো অভিজ্ঞতা, যেখানে নীরবতায়ও শেখার সুযোগ থাকে। সব মিলিয়ে ‘স্বার্থপর’ যে শুধু একটা ছবি নয় বরং আজকের পারিবারিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবিও।