জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এ (Chirodini Tumi Je Amar) বর্তমানে দর্শকদের নজর কেড়েছেন এক বিশেষ চরিত্র—ভৈরবী তারা সুন্দরী মা। এই ভূমিকায় অভিনয় করছেন অভিনেত্রী ‘চৈতালী চক্রবর্তী’ (Chaitali Chakraborty), যিনি নিজের স্বতন্ত্র অভিনয়গুণে টেলিভিশনের পর্দায় আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে গভীর সংগ্রাম, অগণিত প্রত্যাখ্যান আর একরাশ অপমানের ইতিহাস, যা আজও তাঁকে দৃঢ়ভাবে পথ দেখায়।
চৈতালীর কথায়, একসময় তাঁকে বলা হয়েছিল— তিনি আর পাঁচটা সাধারণ বাঙালি মেয়েদের মতো নন, অত্যাধিক লম্বা, গায়ের রং কালো, মুখের থেকে চোখ বড়, তাই হিরোইন হওয়ার স্বপ্ন না দেখাই ভালো। এমনকি তাঁর সহপাঠীরাও বলেছিলেন, “আগে ভিড়ের মধ্যে দশ বছর দাঁড়িয়ে থাকো, তারপর ভাবো হিরোইন হবে।” আত্মীয়স্বজনদের কটূ মন্তব্য, বন্ধুরা হাসাহাসি সবই তখন তাঁর নিত্যসঙ্গী। তবু থেমে থাকেননি তিনি। নিজের সম্পর্কে অটল বিশ্বাসই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ক্লাস টুয়েলভের পর বাবাকে জানিয়েছিলেন, তিনি অভিনেত্রী হতে চান। সেই ইচ্ছাতেই সন্মান জানিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সাঁওলী মিত্রের নাট্যদলে। কিন্তু সেখানে প্রথম পাঁচ বছর তিনি কেবল সাজসজ্জার কাজ করেছেন। শতরঞ্জি পাতা, লাইট ফেলা, অথচ অভিনয়ের সুযোগ পাননি। একটি নাটকে জুরির দলে রিহার্সালের সুযোগ পেয়েও শেষ মুহূর্তে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বেলুড় থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত প্রতিদিন গিয়ে ফিরে চোখের জল ফেলেছিলেন ১৭ বছরের চৈতালী।
তখনই নিজের মনে প্রতিজ্ঞা করেন, একদিন অভিনেত্রী হিসেবেই নিজেকে প্রমাণ করবেন! পরে সাঁওলী মিত্রকে যখন জানান যে অন্য একটি নাটকে সুযোগ পেয়েছেন, তাঁকে বলা হয়েছিল, “একদিন এই সিদ্ধান্তের জন্য আফসোস করবে।” কিন্তু আজ চৈতালী গর্ব করে বলেন, সেই আফসোস কোনওদিনই তাঁকে ছুঁতে পারেনি। নিজের জেদ, পরিশ্রম আর বাবার অটল সমর্থনই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে আজকের জায়গায়। অভিনয়জীবনের শুরুতে তিনি অগণিত অপমান সহ্য করেছেন। একবার হতাশ হয়ে বাবাকে বলেছিলেন, তিনি আদৌ অভিনেত্রী হতে পারবেন কিনা।
পরিতোষ পাল, তাঁর বাবা তখন বলেছিলেন, “সব শুনেও কান দিস না, এগিয়ে যা।” ছোটবেলায় চৈতালী বাবাকে বলেছিলেন, “বড় হয়ে মুক্ত কিনব” উত্তরে বাবা বলেছিলেন, “না, তুই হীরে কিনবি!” বাবার শেখানো সেই স্বপ্ন দেখার সাহসই আজ তাঁর ভরসা। পরে যখন খ্যাতনামা পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাঁকে ‘লাল দরজা’ ছবির জন্য ডাকেন, তখন তাঁর জীবনে এক বিরাট সুযোগ আসে। কিন্তু সেই সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, ফলে কাজটি হাতছাড়া হয়। আজও সেই ঘটনাটি মনে পড়লে কষ্ট হয়, তবে আফসোস নয়— কারণ তাঁর কাছে পরিবারই সবচেয়ে বড় মূল্যবোধ।
আরও পড়ুনঃ “সুযোগ পেতে গেলে দেখাতে হবে ইনস্টাগ্রামে আপনার ফলোয়ার সংখ্যা কত”, “অভিনয় না জানলেও চলবে, ফলোয়ার থাকলেই আপনি অভিনেতা!” এই ভাবেই এখন প্রতিভার বিচার হয় বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে! বাস্তবতা চেনালেন সাগ্নিক
সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা, তাঁর মেয়ে বড় হয়ে যখন এই কথা জানতে পারে, মা একসময় গর্ভবতী অবস্থায় সিনেমার সুযোগ ছেড়ে দিয়েছিলেন। মেয়ে বিস্মিত হয়ে বলে, “তুমি এত বড় সুযোগ কেন ছেড়ে দিলে? দরকার হলে আমায় অ্যাবর্ট করে দিতে!” উত্তরে চৈতালী নরম গলায় জানিয়েছেন, “না, মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে হিসেবে আমার কাছে মূল্যবোধটাই বড়। একটা ছবি পাইনি তো অন্যটা করব, কিন্তু একটা প্রাণকে হত্যা করে নয়।” আজও যখন কেউ তাঁকে ‘রাক্ষসী’ বলে কটাক্ষ করে, তিনি বলেন, “রাক্ষসী বলেই হয়তো রোজ কাজ পাচ্ছি, আর তারা হন্যে হয়ে স্টুডিও পাড়ায় ঘুরছে।”