অভিনয় জগতে টিকে থাকার লড়াইটা সহজ নয় আর সেটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যখন বয়স, চেহারা বা সমাজ মাধ্যমের ফলোয়ার সংখ্যাই হয়ে ওঠে মূল বিচার। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ‘সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়’ (Sagnik Chatterjee) বেশ খোলাখুলি ভাবেই এই বাস্তব ছবিটা তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, অভিনয় দক্ষতা এখন আর প্রথম শর্ত নয়, বরং দেখা হয় আপনি কেমন ‘দেখাচ্ছেন’, আপনার বয়স কত, আর ইনস্টাগ্রামে আপনাকে কতজন ‘ফলো’ করছে। এই জায়গাগুলো থেকে বারবার প্রমাণ হয়ে যায় যে ইন্ডাস্ট্রি যতই বলুক অভিনয়ই মুখ্য, আদতে সেটা অনেক সময়ই মুখের কথা হয়েই থাকে।
সাগ্নিকের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে এসেছে এমন এক ঘটনার কথা, যেখানে তিনি কাজ পেয়েছিলেন একটি দক্ষিণ ভারতভিত্তিক চ্যানেলে। সেখানে দেখা যাচ্ছিল, নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নেওয়া হচ্ছে তাঁদের ফলোয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে। তিনি প্রযোজকদের প্রশ্ন করেন, “তাহলে কি অভিনয় না জানলেও ফলোয়ার থাকলেই কাজ পাওয়া যায়?” প্রযোজকদের সোজা উত্তর ছিল, “হ্যাঁ, বড় চ্যানেলে এভাবেই কাজ হয় এখন।” কিন্তু সাগ্নিক তখন জিজ্ঞেস করেন, “আমার তো ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার কম, তাহলে আমায় কেন?”
উত্তরটা একদিকে যেমন প্রশংসার, অন্যদিকে তেমনই চিন্তার। তাঁকে বলা হয়, ইনস্টাগ্রামে তাঁর পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে তাঁকে অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে একাধিক প্রতিষ্ঠিত তারকার সঙ্গে আর সেগুলোই প্রমাণ করেছে তাঁর দক্ষতা। আর এখানেই সাগ্নিক প্রশ্ন তোলেন, “তাহলে কি ভবিষ্যতে টিকে থাকতে আমাকেও ফলোয়ার বাড়ানোর দিকেই মনোযোগ দিতে হবে?” এই ধরনের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি উপলব্ধি করেন, ইন্ডাস্ট্রিতে আজও একটা অদৃশ্য পক্ষপাত কাজ করে।
বয়স একটু বেড়ে গেলে, শরীর যত্নে থাকলেও, আপনি ‘হিরো’ নন, বরং ‘বাবা’, ‘কাকা’ বা পার্শ্বচরিত্রের জন্যই উপযুক্ত-এই ধারণা অনেক সময় গেঁথে যায়। সাগ্নিক বলেন, “আমার মতোই কেউ শরীরের অযত্ন করছে বলে গৌণ চরিত্র করছে। কিন্তু আমি যত্ন নিলেও কেন পারব না ভালো চরিত্র?” তবে সাগ্নিকের যাত্রাটা থেমে যাওয়ার ছিল না। শুরুটা হয়েছিল ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে হিসেবে, কিন্তু ছোট থেকেই সাগ্নিক অনুভব করতেন অভিনয় করার জন্যই তিনি জন্মেছেন।
আরও পড়ুনঃ “দীপাবলির আলো যেন কারর অন্ধকার না হয়”— কালীপুজোর শব্দবাজিতে ছোটদের, বয়স্কদের ও পোষ্যদের আতঙ্ক নিয়ে মুখ খুললেন অনিন্দিতা রায়চৌধুরী! মূল্যবোধ হারানো বর্তমান সমাজের মানসিকতা নিয়ে সমাজমাধ্যমে তীব্র প্রশ্ন তুললেন অভিনেত্রী!
যদিও সেই স্বপ্ন প্রথমেই ভেঙে পড়ে যখন জানানো হয়, তিনি ‘হিরো’ হবার মতো দেখতে নন। সাজগোজ, চেহারা, সবই হিরোইজমের সংজ্ঞার বাইরে। কিন্তু সাগ্নিক সেই প্রথম ধাক্কায় হাল না ছেড়ে, নিজের অভিনয় ক্ষমতার দিকেই মন দেন। আজ তিনি ছোট কিংবা বড় পর্দায় যেই চরিত্রেই অভিনয় করেন, সেটা যেন তাঁর ভেতরের অংশ হয়ে ওঠে। তিনি বিশ্বাস করেন, অভিনয় শুধুই চেহারা দিয়ে বিচার করার বিষয় নয় বরং চরিত্রের গভীরে ডুবে যাওয়ার এক দক্ষতা। সেটাই তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি।