“মা, আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো”, সেই ডাক আজও কানে বাজে! একমাত্র ছেলেকে নিজের কাছে রাখতে চেয়েও পারেননি তুলিকা! টাকার অভাবে দূরে পাঠানো সন্তানের স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায় অভিনেত্রীকে!

টলিউডে অতি পরিচিত মুখ হলেও ‘তুলিকা বসু’র (Tulika Basu) জীবনে, পর্দার ভেতরে ও বাইরে এক ভিন্ন গল্প আছে, যা হয়তো সবসময় আলোচনায় আসেনি। একসময় ক্যামেরার জন্য ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে আর ধারাবাহিক থেকে সিনেমা, সব জায়গায় ছিল তাঁর সহজ উপস্থিতি। কিন্তু পেশার গতি কমতে শুরু করা মাত্রই জীবনের অন্য অধ্যায় সামনে এসে উপস্থিত! একটা সময়ের পর পারিশ্রমিক মিলছিল না, কাজের সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছিল বারবার। তবুও অভিনয় থেকে সরে না গিয়ে, মঞ্চকে বেছে নিলেন তিনি। যাত্রাপালায় চরিত্র পেলেন, নিয়মিত অভিনয় করছেন এখন সেখানেই।

কাজের লড়াইয়ের মধ্যেই, এবার সামনে এসেছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের লড়াইয়ের অধ্যায়ও। জীবনের কঠিন সময় মূলত শুরু হয় তাঁর সংসার থেকেই। তুলিকার বিয়ে হয়েছিল এমন একজনের সঙ্গে, যার শিকড় যুক্ত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে। শুরুতে সব ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত নড়ে যায়। ধীরে ধীরে এমন জায়গায় পৌঁছায় পরিস্থিতি যে আলাদা হওয়া ছাড়া আর কোনও পথ খোলা থাকেনি। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে আসার মুহূর্তটাই নাকি ছিল সবচেয়ে কঠিন। কোনও স্থায়ী রোজগার নেই, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত আর তার মাঝেই শুরু একা পথচলা।

ছেলের বয়স তখন খুবই কম, ওই সাত-আট বছর মাত্র। তখন পরিস্থিতির চাপে ছেলেকে বাধ্য হয়ে দূরে পাঠাতে হয়। স্বামীই ব্যবস্থা করে ছেলেকে কার্শিয়ং-এর হোস্টেলে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তুলিকার কাছে সেই সিদ্ধান্ত ছিল অত্যন্ত কষ্টের, যেন নিজের হাতে তৈরি মানুষটাকেই দূরে ঠেলে দেওয়া। কাজের মাঝে থাকলেও, শুটিং ফ্লোরের আওয়াজের মধ্যে মাঝেমধ্যেই কানে বাজত একটি ডাক “মা!” সেই সময় তুলিকা বুঝতে পেরেছিলেন যে নিজের উপার্জন কেবল ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জন্য নয়, সন্তানের পাশে দাঁড়ানোর শক্তির জন্যও জরুরি।

সেই উপলব্ধিই তাঁর লড়াইকে আরও বাস্তব এবং জরুরি করে তুলেছিল। তবে আজও তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং স্বীকার করেন যে যাত্রার মঞ্চ বা সিনেমায়, যেখানে যেমন সুযোগ মিলছে, সেখানেই তিনি নিজের সেরাটা দিয়েছেন। সম্প্রতি বড়পর্দার ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ ছবিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে আর সামনে নাকি নতুন কাজের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির অনিশ্চয়তার মাঝে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তা আছে, কিন্তু ছেলেই এখন তাঁর সবচেয়ে বড় ভরসা।

আরও পড়ুনঃ “মেয়ে শহরে যাবে না!” পুরুলিয়ার মাটি থেকে কলকাতা, অসংখ্য বাধা পেরিয়ে জেদ আর দক্ষতায় অভিনেত্রী হয়ে উঠলেন ইন্দ্রানী! কিন্তু মাত্র তিন মাসেই বন্ধ ‘বেদেনি জ্যোৎস্নার অমর প্রেম’! এবার বড় চ্যানেলে কোন নতুন ধারাবাহিকে ফিরছেন নায়িকা হয়ে?

সেই সম্পর্কেই হয়তো তিনি বেঁচে থাকার শক্তি খুঁজে পান।সংগ্রাম, অনিশ্চয়তা ও বিচ্ছেদ মিলিয়ে তুলিকা বসুর গল্পটা কোনও অভিনেত্রী গ্ল্যামারাস সাজানো ছবি নয়। বরং এমন এক যাত্রা, যেখানে প্রত্যেক ধাপে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আত্মবিশ্বাস এবং ঈশ্বরের উপর ভরসায়। হয়তো এই কারণেই আজ তিনি আরও সচেতন। অভিনয়ই তাঁর চেনা পৃথিবী, তাই পথ কঠিন হলেও সেখানেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি, নিজের মতো করে, নীরবে।

You cannot copy content of this page