টলিপাড়ার চেনা মুখ ‘সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়’ (Subhadra Mukherjee) যেন হঠাৎ করেই আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। একসময় যাঁর প্রাণবন্ত হাসি আর উচ্ছ্বল উপস্থিতি দর্শকদের মুগ্ধ করত, সেই মানুষটাই ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। নানা শোক, একের পর এক আপনজন হারানোর যন্ত্রণায় জীবনের রঙ যেন ফিকে হয়ে গিয়েছিল তাঁর কাছে। সাজগোজ, ক্যামেরার আলো বা চরিত্রে ডুবে থাকার দিনগুলো যেন একটানে দূরে সরে যায়। আজকাল তাঁকে দেখা যায় অনেকটাই শান্ত, প্রায়শই সাদা পোশাকে।
ব্যক্তিগত জীবনের ধাক্কা এতটাই গভীর ছিল যে, অভিনয় থেকেও স্বেচ্ছায় সরে আসেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত সকালগুলোর একটা। স্বামী ফিরোজ হঠাৎ করেই চলে গেলেন চিরতরে, কোনওরকম পূর্বাভাস ছাড়াই। আগের রাতে স্বাভাবিক তারপর আচমকা স্ট্রোক, সব যেন থমকে গেল এক মুহূর্তে। মাত্র ৫৭ বছর বয়সে সুস্থ স্বামীর এই বিদায় মেনে নিতে পারেননি সুভদ্রা। অনেক দিন চুপচাপ থেকেছেন, কারো সঙ্গে বেশি কথা বলেননি।
কিন্তু এখন, ধীরে ধীরে নিজের যুদ্ধের কথা নিজেই ভাগ করে নিচ্ছেন সকলের সঙ্গে। এদিন এক সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, “আমি তো পাশেই ছিলাম ওর, হয়তো তখনই মারা গেছে ও। পরদিন সকালে আমি ইচ্ছে করেই তুলিনি তাড়াতাড়ি, ভাবলাম আর একটু ঘুমিয়ে নিক। আমার ছোট মেয়েটা বাবাকে ডেকে সাড়া না পেয়েই স্কুলে চলে গিয়েছিল। সকাল নয়টার পর ও উঠছে না দেখে আমি যখন ডাকাডাকি করি, বুঝতে পারি আর নেই ও! সেই সময় কি করব বুঝতেই পারছিলাম না। দুই বাবা মারা যাওয়াতেও এতো অসহায় লাগেনি আমার।
বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করি। সেই সময় পরিবারকে বা তথাকথিত আত্মীয়দের পাশে পাইনি, যেভাবে শাসকদলের কিছু লোকজনকে পেয়েছিলাম।” অনেক আক্ষেপ চেপে রেখে তিনি আরও বললেন, “শুধু যে স্বামী বা দুই বাবার মৃ’ত্যু হয়েছিল তা নয়, আরও অনেক মানুষের মৃ’ত্যু দেখেছি। হয়তো তারা এখনও জীবিত, কিন্তু আমার কাছে তার আর নেই। আমার স্বামীর ভাইকে নিজের সন্তানের মতো করে বড় করেছিলাম। স্বামীর থেকে দশ বছরের ছোট সে, একবারও খোঁজ নিতে এলো না!” মেয়েকে নিয়ে অভিনেত্রী এখন বাঁচেন রোজ।
আরও পড়ুনঃ “আমরা গতবছরই যে কার্নিভাল দেখেছিলাম, সেই অনুপাতে এবারেরটা নস্যি! যদি গত বছরই হয়ে থাকে, এটা কি আশা করা যায়, এই বছর হবে না, নর্থ বেঙ্গলের জন্য?” শাসক দলকে ক’টাক্ষ দেবলীনার
মেয়ের প্রসঙ্গে তিনি বললেন, “আমার এই ছোট্ট মেয়েটা ভীষণ পরিণত হয়ে গেছে এই কয়েকটা দিনেই। এখন দেখলে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার মতো লাগবে, মেয়েটার কিশোরীটাই তো বাবার সঙ্গে হারিয়ে গেল! আমি যখন ভেঙে পড়েছিলেন, একটা কথা মেয়েটা রোজ বলতো— আমার ডাকে বাবা তো উঠল না। চোখের সামনে বাবাকে মর’তে দেখেছি, তোমাকে ম’রতে দেব না। ছেলেটা তো বিয়ের পরেই বউ নিয়ে বিদেশ থাকে, সব সময় বিরক্ত করা যায় না। তবে, মেয়েকে ঘিরেই আমার জীবন এখন। মেয়েই আমার অভিভাবক।”