বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা মারা গেছেন তিনটে দিন হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো গোটা বঙ্গবাসি তার এই হঠাৎ চলে যাওয়াকে মেনে নিয়ে উঠতে পারেনি। দু’বার ক্যান্সারকে হারিয়ে নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরেও তৃতীয়বারে তাকে হার মানতে হয়েছে। দীর্ঘ কুড়ি দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন অভিনেত্রী। কিন্তু ২০ তম দিনে তার সংজ্ঞা ফিরে ছিল এমনটাই বললেন অভিনেত্রীর চিকিৎসক।
সম্প্রতি একটি নামই সংবাদমাধ্যমের হয়ে ঐন্দ্রিলার চিকিৎসক তার সম্বন্ধে লেখেন। সেখানেই অভিনেত্রীর জীবনের শেষ দিনগুলি নিয়ে বেশ কিছু অজানা তথ্য সামনে এনেছেন তিনি। সেই সঙ্গে ২৪ বছরে এই মেয়েটিকে ‘ফাইটার’ ঐন্দ্রিলা হিসাবে কুর্নিশও জানিয়েছেন।
এদিন অভিনেত্রীর চিকিৎসকের কথায়, ‘শুধুমাত্র নিজের মনের জোরে একজন মানুষ কীভাবে নিজেকে মৃত্যুর মুখ থেকে বারবার ফিরিয়ে এনেছে আমি তার সাক্ষী। আমায় কখনও বলতে হয়নি ‘ফাইট ঐন্দ্রিলা ফাইট’।
তিনি জানান দীর্ঘদিন ধরে তার চিকিৎসা করছিলেন। তাই ঐন্দ্রিলার লড়াকু মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন চিকিৎসক। তার কথায় শুধুমাত্র দুর্বল মনের হওয়ার জন্য বহু ক্যান্সার রোগী জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে যান। কিন্তু ঐন্দ্রিলা ছিলেন এই সব কিছুর ব্যতিক্রমী। দুবার সেই জন্য হাসিমুখে এই মারণ রোগকে হারিয়ে ফিরে এসেছিলেন তিনি।
২০১৫ সালে প্রথমবার টলি অভিনেত্রীর শরীরে ক্যান্সার পাওয়া যায়। প্রথমে তার অস্থিমজ্জার ক্যান্সার হয়েছিল। সেই লড়াই করে দীর্ঘ ট্রিটমেন্টের পরে তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। কিন্তু তার কয়েক বছর পর আবার ২০২১ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। দ্বিতীয়বার তার ফুসফুসে ক্যান্সার হয়।
ঐন্দ্রিলার চিকিৎসক জানিয়েছেন, দ্বিতীয়বারের অপারেশন এতটাই জটিল ছিল যে অপারেশন টেবিলেই তাঁর মৃত্যু হতে পারত। আর সে কথা তাকে জানানো হয়েছিল। তখন সে একবারের জন্য না ভেবেই বলেছিল অপারেশন করতে। নিজের মনের জোর নিয়েই সেই লড়াইয়ে জয়ী হয়ে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের কাছে হেরে যেতে হয় তাকে।
ঐন্দ্রিলার চিকিৎসক জানান, স্ট্রোক হওয়ার পর ঐন্দ্রিলার শরীর প্রচণ্ড কাহিল হয়ে পড়েছিল। তবে ২০ দিন ধরে প্রচণ্ড লড়াই করেছে মেয়েটা। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেন কখনো তার শরীর চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছে আবার কখনো অবস্থার অবনতি ঘটেছে। শেষে ক্যান্সারের জন্য তার মস্তিষ্কের ভেসেল প্রচন্ড ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছিল।
ঐন্দ্রিলার বায়োপসি করার পর দেখা যায় ক্যান্সারের কোষের সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসক এদিন জানান যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২০ তম দিন অর্থাৎ মারা যাওয়ার দিন ঐন্দ্রিলার জ্ঞান ফিরেছিল। কিন্তু সে কথা বলতে পারেনি। কারণ তার মুখে পাইপ ছিল। কিন্তু তার শরীর যে বারবার সাড়া দিচ্ছিল সে কোথাও জানান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেননি অভিনেত্রী। রবিবার দুপুর ১২:৫৯ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা।