“একসময় চেয়েছিলাম ও যেন কষ্ট না পেয়ে চলে যায়!”— স্বামী দেবরাজ রায়ের মৃত্যু নিয়ে অনুরাধার বেদনা! বিয়ের পরও অভিনয়ে ব্যস্ততায় সন্তান এলো না, থিয়েটারের মাঝে হারিয়ে গেল মাতৃত্ব!

“ভালোবাসা ছিল, বিয়ে হলো শুধু একটা ‘সন্তান’ই অধরা থেকে গেল!”— অনুরাধা রায়ের কষ্টের কাহিনি! দুই মঞ্চশিল্পীর প্রেম থেকে বিয়ে, আর তারপর নিরব নিঃসঙ্গতা! এক সময় স্বামীর মৃ’ত্যু কামনাও করেছিলেন তিনি!

অভিজ্ঞ টলিউড অভিনেত্রী ‘অনুরাধা রায়’ (Anuradha Ray) দীর্ঘদিন ধরে বাংলা বিনোদন দুনিয়ার এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুখ। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা—দুই জায়গাতেই তাঁর অভিনয়ের দক্ষতায় বারবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। বর্তমানে ‘মিত্তির বাড়ি’তে ‘ঠাম্মি’ চরিত্রে তাঁর সাবলীল ও প্রাণবন্ত অভিনয় দর্শকমনে দাগ কেটেছে। বাস্তব জীবনের অনুরাধাও তেমনই সহজ, আত্মপ্রচারের প্রতি অনাগ্রহী, কিন্তু নিজের কাজ ও পারিবারিক মূল্যবোধে দৃঢ়। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি খোলাখুলি ভাগ করে নিলেন তাঁর প্রেম-বৈবাহিক জীবনের নানান অজানা অধ্যায়। যার মধ্যে রয়েছে জীবনের বড় অপ্রাপ্তি!

থিয়েটারের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই যুক্ত ছিলেন অনুরাধা। বাবার হাত ধরেই শুরু অভিনয়জীবন, যিনি নিজেও একজন নাট্যকর্মী ছিলেন। স্বামী দেবরাজ রায়ের (Debraj Roy) পরিবারের সঙ্গেও সেই থিয়েটার সূত্রেই তৈরি হয় বন্ধুত্ব, যা পরে প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়। কিন্তু অভিনেত্রীর পরিবারের দিক থেকে এই সম্পর্ক শুরুতে মেনে নেওয়া হয়নি। অনুরাধার বাবা এই সম্পর্ক নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন এবং পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ পরিবারের অমতেই অনুরাধা ও দেবরাজ রেজিস্ট্রি করেন।

যেখানে কনে পক্ষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। যদিও স্বামীর পরিবার তাঁদের এই সিদ্ধান্তে পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং বিয়ের সমস্ত আয়োজন করেছিল, বিয়ের অনুষ্ঠান চলেছিল তিনদিন ধরে। বিয়ের পরেই কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন অনুরাধা এবং থিয়েটারের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তাঁর স্বামীও অভিনয় এবং থিয়েটারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। এই দুজনের পেশাগত ব্যস্ততার মাঝে একটি বিষয়ই অধরা থেকে যায়—সন্তান, অভিনেত্রীর জীবনের বড় অপ্রাপ্তি হয়তো সেটাই।

এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী জানান, সময় বা আলোচনা কোনোটারই সুযোগ ছিল না। থিয়েটারের কারণে তখন দেশের এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করতেই সময় কেটে যেত। তবে আজ তাতে অভিনেত্রীর কোনও তীব্র আক্ষেপ নেই, কারণ তিনি বিষয়টিকে বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। শ্বশুরবাড়ির সদস্যরাও ছিলেন অত্যন্ত উদারমনস্ক, তাঁরা অনুরাধার জীবনে সন্তান না থাকার বিষয়টি নিয়ে কোনওরকম চাপ সৃষ্টি করেননি। তবে দীর্ঘ দিনের এই দাম্পত্যে হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে দেবরাজ রায়ের অসুস্থতার মধ্য দিয়ে।

আরও পড়ুনঃ “ইতিহাস ফিরে আসেই…বুকের বাঁদিকটা চিনচিন করছে তো?”— রাজের স্ট্রাগল সঙ্গী তথা প্রথম স্ত্রী শতাব্দীর খোঁচা! এক যুগ পর শুভশ্রী প্রাক্তন দেবের পাশে, আর ঠিক তখনই রাজকে সমাজ মাধ্যমে বিঁধলেন শতাব্দী!

২০১৮ সালে সেরিব্রাল অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তিনি, স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন এবং সিঁড়ি দিয়ে পড়ে কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় অপারেশনের পর আরও জটিল হয় পরিস্থিতি। সেই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে একসময় অনুরাধা নিজেই চেয়েছিলেন, তাঁর স্বামী যেন শান্তিতে বিদায় নেন। পরবর্তীতে দেবরাজ রায়ের মৃত্যু অনুরাধাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। তবে সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে ফের মূলস্রোতে ফিরেছেন অভিনেত্রী। বর্তমানে বৌদির সঙ্গে এক ছাদের নিচেই থাকেন তিনি এবং আবারও কাজে মন দিয়েছেন।