অস্ত্রোপচার হয়েও শেষরক্ষা হলনা! প্র’য়াত মঞ্চ ও পর্দার প্রিয় মুখ, অভিনেত্রী-পরিচালক ভদ্রা বসু! স্তব্ধ টলিউড

মঞ্চ ও পর্দার প্রিয় মুখ, অভিনেত্রী-পরিচালক ভদ্রা বসু আর নেই। প্রায় ৬৫ বছর বয়সে ইতি হল তাঁর জীবনযাত্রার। তিন দিন আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল তাঁকে। তবে শেষরক্ষা হল না। শুক্রবার গভীর রাতে নিভে গেল তাঁর প্রাণপ্রদীপ। খবর পেয়েই শিল্পী মহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

ভদ্রা বসু ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যপরিচালক অসিত বসুর স্ত্রী। দুই মেয়ে দামিনী বেণী বসু এবং আনন্দী বসু—দু’জনেই মঞ্চ ও অভিনয় জগতের প্রতিষ্ঠিত নাম। দামিনীর প্রাক্তন স্বামী ও অভিনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন ভদ্রার অত্যন্ত কাছের মানুষদের একজন। বিবাহবিচ্ছেদের পরেও ভদ্রার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল মায়ের মতোই। তাই মায়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর ভেঙে পড়েছেন তিনি। সুদীপের কথায়, “আমার নিজের মা-বাবাকে হারানোর পর ওঁদেরকেই মা-বাবার জায়গায় বসিয়েছিলাম। এত স্নেহশীল, প্রাণবন্ত মানুষ খুব কম দেখেছি।”

নিমতলা ঘাটে ভদ্রা বসুর শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন নাট্য ও পর্দার বহু পরিচিত মুখ। শিল্পীমহল একসুরে বলছে—ভদ্রা বসুর প্রস্থান এক যুগের অবসান। অভিনেত্রী স্বাগতা মুখোপাধ্যায় স্মরণ করেন, “মঞ্চে প্রথম ‘গওহরজান’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম ওঁরই পরিচালনায়। পরে আমার নিজের নাটক দেখতে এসেছিলেন, খুব উৎসাহ দিতেন।” অভিনেতা সোহন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “ভদ্রাদি শুধু অভিনেত্রী বা পরিচালকই নন, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তাঁর দখল ছিল অসাধারণ।”

মঞ্চনাটকের পাশাপাশি টেলিভিশন সিরিজ় এবং সিনেমাতেও জোরদার উপস্থিতি ছিল ভদ্রার। সুমন মুখোপাধ্যায়ের পুতুলনাচের ইতিকথা থেকে অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়ের বেলা—বহু প্রশংসিত কাজে তাঁর অভিনয় আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে। নিজের নিষ্ঠা, মমতা এবং শিল্পের প্রতি গভীর ভালোবাসায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন নাট্যজগতের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।

আরও পড়ুনঃ “একই ধরনের চরিত্র আর ভালো লাগছিল না…নেগেটিভ মানেই জল ঢালছি, বি’ষ মেশাচ্ছিটা নিতে পারছিলাম না!” “আমাকে শুধু ডাকা হতো, যখন কাউকে পাওয়া যেত না!”– টাইপকাস্টিং থেকে অসম্মানজনক ব্যবহারে ক্লান্ত হয়েই অভিনয় ছেড়েছিলেন তিতাস ভৌমিক!

ভদ্রা বসুর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা সাংস্কৃতিক দুনিয়া। তাঁর হাসিমুখ, স্নেহময় আচরণ এবং সৃজনশীলতা থাকবে অনন্ত স্মৃতিতে। শিল্পীর চলে যাওয়া শূন্যতাকে আরও তীব্র করে তোলে—কারণ তাঁর মতো মানুষরা শুধু কাজ দিয়ে নয়, হৃদয়ে জায়গা করে নেন চিরদিনের মতো।

You cannot copy content of this page