Suchitra Sen: যে বাড়ি থেকে ফিরে গিয়েছেন সত্যজিৎ রায়ও সেই বাড়ি থেকেই মহানায়িকার অন্ত’র্বা’স বাঁধিয়ে রেখেছেন ভক্তরা! জানতেন কি আপনি?
কলকাতার চূড়ান্ত গণতন্ত্রের সময়ও মুকুটহীন রাণী তিনি। যখন পুরুষদের নামে ঘোমটা পরেই নারীরা নিজেদের গর্বিত করছেন তখন নিজের পরিচয়েই পরিচিতা তিনি। কলকাতা তথা বাংলা সিনেমা তখন পেয়েছে মহানায়ককে, পাশপাশি আরও বেশি মাথায় তুলে রেখেছিল মহানায়িকাকে। কিন্তু রুপোলি পর্দার সুন্দরী সুচিত্রার জীবন ছিল বেশ অশান্তির। কিন্তু তিনি তো মহানায়িকা… জানতেন কীভাবে নিজেকে সংযত করতে হয়। নিজের কদর কীভাবে সবথেকে বেশি রাখতে হয়। তবেই না যখন তাঁর সমকালীন প্রত্যেকটি অভিনেত্রী হাজার অঙ্কের পারিশ্রমিক নিচ্ছেন তখন সুচিত্রাকে রাজি করানো যায়নি লাখেও। তখন পুরুষকেন্দ্রিক সিনেমার চল স্বাভাবিকভাবেই বেশি ছিল। তাতেও মহানায়কের পারিশ্রমিক যখন দেড় লাখ তখন সাড়ে সাত লাখেও রাজি হননি সুচিত্রা, এমন ঘটনাও রয়েছে।
আসলে আত্মসম্মানবোধ সম্পর্কে বেশ ভালই জ্ঞান ছিল তাঁর। কোনওদিন সেটাকে কাউকে এক বিন্দু স্পর্শ করতে দেননি তিনি। স্বামীর পাশে দাঁড়াতেই কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে আসা। আসামাত্রই খ্যাতি চারিদিকে। স্বামী তা মেনে নিতে না পারলে ছেড়ে চলে যান স্বামীকেও। নিজের মেয়েকে একা কলকাতা শহরের বেশ কয়েকটা ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। অবশেষে ১৯৬০ সালে কেনেন এক রাজপ্রাসাদ। সত্যিই, স্বপ্নের সুচিত্রাপুরি। দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শচীন্দ্র চৌধুরীর বাড়ি ছিল এটি। ১৯ কাঠা জায়গার উপর ছিল এই বাড়ি।
সেই বাড়িতে শ্যুট করতে চেয়েছেন সত্যজিৎ রায় থেকে রাজ কাপুর। শ্যুটের অনুমতিতো দূর, অন্দরমহলে পর্যন্ত ঢোকার ভাগ্য হয়নি বহুজনের। কিন্তু পরিচালক বিজয় বসুর সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা ছিল। ফলে সেই সিনেমায় ওই রাজপ্রাসাদের বেশকিছু অংশ ধরা আছে। বলা যেতে পারে সিনেমাটি একটি ডকুমেন্টরিও।
যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশেষে একসময় অভিনয় জগৎ থেকে বিদায় নেন মহানায়িকা। নিজেকে নবাগতদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে, তাঁর মুখের সামনে দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়া হবে, মাসি – পিসির ন্যাকা চরিত্রে রাজি ছিলেন না তিনি। ততদিনে বেশকিছু দাগও লেগে গিয়েছিল তাঁর অভিনয়ের পর্দায়। সত্যজিতের নায়িকা তিনি হননি, শুধুমাত্র রূপেই তাঁর কামাল, আরও কত কী! কিন্তু খবরের কাগজের কোনও সমালোচনাকেই পাত্তা দিতেন না তিনি। বরং ব্যস্ত থাকতেন নিজের প্রাসাদে। সেখানে তাঁর এক ঝাঁক পাখি, কুকুর, বাঁদর সব ছিল।
কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে কমে এসে একা টিকে থাকার অদম্য এই শক্তি। অবশেষে এত বড় প্রাসাদ যার অধিকাংশ ঘর ফাঁকাই থাকত, সেটাকে বেচে দেন তিনি। হেরিটেজ তকমা দেওয়া যায়নি সেই বাড়িতে। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আরবান ল্যান্ড সিলিং অ্যাক্ট অনুযায়ী কেউ ন’কাঠার বেশি জমি রাখতে পারত না।
ওই বাড়ি ভাঙার সময়ও বড় করে খবর হল। এতদিন যাঁরা বারবার প্রাসাদের গেট থেকে বিতাড়িত হয়েছেন তাঁরা ঢুকে যেতে পারছিলেন ভিতরে। মহানায়িকার দেখা না পাওয়া যাক, তাঁর বহু ব্যবহার্য জিনিস তখন ধুলোয় মিশে যাচ্ছে। অনেকে ওই বাড়ির এক টুকরো ইট কুড়িয়ে এনে রেখেছিলেন। আবার অনেক খুঁজে খুঁজে ধ্বংসস্তুপে কেউ খুঁজে পেলেন সুচিত্রার অন্তর্বাস। তাই মাথায় করে প্রণাম করতে করতে দৌড় মেরেছিলেন অনেকে। মহানায়িকা বলে কথা, এটুকু ক্রেজতো থাকবেই।
জীবনের শেষ সময় যদিও ওই একই ঠিকানায় কাটে তাঁর। খালি প্রাসাদের বদলে সেখানে গড়ে ওঠে ফ্ল্যাট। মেয়ে মুনমুন ও দুই নাতনি যাদের আমরা রিয়া – রাইমা নামে চিনি, তাঁদের নিয়ে পাশপাশি ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। মহানায়িকার মৃত্যুর পর তাঁর নানা ছবি দিয়ে সেই ফ্ল্যাট সাজিয়ে রাখা হয়। কিন্তু এখনও সেখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। তিনি যেন সবসময়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাঁকে দেখতে হয় আড়াল থেকে, লুকিয়ে