প্রায় অনেক দশক ধরে যিনি টলিউডের মঞ্চে, পর্দায়, নাটকে একের পর এক অসাধারণ চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, তিনি অভিনেতা ‘চন্দন সেন’ (Chandan Sen) । তবে তিনি কেবল একজন শিল্পী নন, এক প্রবল যোদ্ধাও বটে। অসুস্থতা, জীবনের নানা টানাপোড়েন, এমনকি ক্যান্সারের মতো কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়ে আজও যিনি সাহসের সঙ্গে অভিনয়ের ময়দানে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর অভিনয় কেবল দক্ষতা নয়, তা যেন তাঁর নিঃশ্বাসে মিশে থাকা এক জীবনচর্চা।
অপর্ণা সেন থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষ, প্রভাত রায় থেকে অঞ্জন দত্ত – নানা ঘরানার পরিচালকের সঙ্গেও কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছেন, কতটা পরিসরের মধ্যে অভিনয়ের ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। নাট্যমঞ্চে চন্দনের উপস্থিতি চিরকালই ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। চরিত্রের গভীরে প্রবেশ করে জীবনের কঠিন রঙগুলো নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁর স্বাতন্ত্র্য। সিনেমা বা ধারাবাহিক – চন্দনের স্পর্শ মানেই দৃশ্যটিকে এক নতুন জীবন দেওয়া।
তবে এমন দীর্ঘ অভিনয় জীবনের মাঝে থেকেও, তাঁর মনে রয়েছে কিছু তীব্র অভিমান। শুধুই শিল্পী হিসেবে নয়, সমাজসচেতন নাগরিক হিসেবেও চন্দন বারবার উঠে এসেছেন আলোচনায়। নতুন প্রজন্মের প্রতি তাঁর কণ্ঠে যেমন আশার সুর, তেমনি আছে উদ্বেগও। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রকাশ করেন, প্রযুক্তির প্রতি ছোটদের অতিরিক্ত আসক্তি এবং বই পড়ার প্রতি অনীহা তাঁকে ভাবিয়ে তোলে।আজকের মায়েরা সন্তানদের খাবার খাওয়া নিয়ে যতটা চিন্তিত, মনের খাদ্য – অর্থাৎ বই পড়া নিয়ে নয়!
মায়েরা সন্তানদের সাহিত্যের প্রতি তাদের টান বা চিন্তাশক্তি নিয়ে ততটা সচেতন নন বলেই তাঁর ক্ষোভ। তাঁর কথায়, ‘‘আজকাল বাচ্চাদের মায়েরা খালি বলেন যে তার বাচ্চা এটা খায় না ওটা খায় না, হাজারটা অভিযোগের শেষ নেই। স্কুলে বাচ্চাদের ছেড়ে দিয়ে মায়েরা এক জায়গায় জমা হয়ে বাচ্চাদের নিয়ে আলোচনা করেন। কেউ বলেন, আমার বাচ্চা এই খাওয়ার দিলেও শেষ করে না ওই খাওয়ারও খায় না। কিন্তু আমি বলি শুধু শরীরের কথা ভাবলেই হবে? মগজটার কথা ভাবতে হবে না?
আজ পর্যন্ত কোনও মাকে বলতে শুনলাম না, যে আমার সন্তান ‘লীলা মজুমদার’, ‘সুকুমার রায়’টা শেষ করতে পারলো না!।’’ এমন মন্তব্যে বিতর্ক হওয়াই স্বাভাবিক। চন্দন নিজেই জানান, এমন কথা বলার পরে অনেক ‘গালি’ খেয়েছেন তিনি। কিন্তু তবুও থামেননি। চন্দনের মতে, কোনও প্রজন্মের মানসিক কাঠামো গঠনের পিছনে তাদের ছোটবেলার অভিজ্ঞতা গভীরভাবে জড়িয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, ‘‘ছোট থেকেই আমরা সন্তানদের বোঝাই যে ওরা একা।
আরও পড়ুনঃ কোয়েলের পরে এবার কৌশানী? মহালয়ায় এবার ‘দুর্গা’ রূপে দেখা যেতে পারে বনির প্রেমিকাকে! কানাঘুষো টলিপাড়ায়!
কিন্তু কাজের জগতে গিয়ে আমরা বলি, টিমে কাজ করো। এমন দ্বৈত আচরণই বড় হয়ে অনেকের মনের ভিতরে একাকীত্বের ছাপ ফেলে যায়।’’ এই অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ, কেবল একজন অভিনেতার নয়, একজন সমাজ সচেতন মানুষের তীব্র অভিজ্ঞতার প্রকাশ। অভিনয়ের পাশাপাশি চন্দনের এই চিন্তাভাবনা, তাঁকে আরও একধাপ উঁচুতে নিয়ে যায়। তিনি বারবার প্রমাণ করে দিয়েছেন, শিল্পের মানুষ মানেই কেবল রঙিন আলো নয়, কখনও কখনও সমাজের অন্ধকার দিকেও নজর ফেরানো দায়িত্ব তাঁদের কাঁধেই পড়ে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।