তিনি একাধারে নাট্যকার, পরিচালক এবং অভিনেতা। মঞ্চ থেকে পর্দা—সবখানেই নিজস্ব স্বকীয়তায় দর্শকের মন জয় করেছেন। কিন্তু প্রথাগত সাফল্যের মাপকাঠিতে হয়তো চন্দন সেনের জীবনকে মাপা যাবে না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের একটি নির্মম বাস্তবতা সকলের সামনে তুলে ধরলেন তিনি। এই সত্য কথা শুধু তাঁর জীবনকথা নয়, বরং শিল্পীমনের আত্মসম্মানের প্রতিধ্বনি।
সাম্প্রতিক এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে চন্দন সেন বলেন, “আমার কোনো সঞ্চয় নেই। মানুষের ভালোবাসাতেই বেঁচে আছি।” অভিনেতার এই কথাই মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সাধারণত অভিনেতাদের সম্পর্কে আমাদের এক অভ্যস্ত ধারণা থাকে যে তাঁরা আর্থিকভাবে সুরক্ষিত। কিন্তু চন্দন সেনের এই বক্তব্য সেই ধারণাকে ভেঙে দেয়। তাঁর কথায় উঠে আসে, আজও শুধুমাত্র অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা আর মানুষের প্রশংসা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
একসময় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এই অভিনেতা। শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও মনোবল হারাননি। কেমোথেরাপির যন্ত্রণা সহ্য করেও আবার অভিনয়ে ফিরেছেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার ফলে আর্থিক দিক থেকে সঞ্চয় গড়ে তোলা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। জীবনের সেই কঠিন সময়ে অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি বলেন ডাক্তারদের জন্য তিনি আজকে বেঁচে রয়েছে এমনকি ডাক্তাররা তার থেকে কোনরকম টাকা-পয়সা নেয়নি।
অভিনয় জীবনে প্রচুর কাজ করলেও, অভিনেতা হিসেবে যে আয় হওয়া উচিত, তা পেয়ে অনেকটা থিয়েটারে খরচাতে চলে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। দীর্ঘ মঞ্চজীবন ও সিনেমার অভিজ্ঞতা থাকলেও তিনি বলেন, “আমি কর্পোরেটের লোক নই, আমি শিল্পী। শিল্পের মধ্যে থেকেও শিল্পীদের যে আর্থিক নিরাপত্তা থাকা উচিত, তা আজও অধরা।” তাঁর এই বক্তব্য বাংলা বিনোদন জগতের বাস্তবতাকে সামনে এনে দেয়, যেখানে অনেক অভিনেতাই জীবনযুদ্ধের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন।
আরও পড়ুনঃ “মমতা শঙ্করের মতন মা পেলে সন্তান এমনই হয়”— মায়ের স্পষ্টভাষী মনোভাবই জীবনের শিক্ষায় আলো এনে দিয়েছে, অকপট প্রশংসা ছেলে রাতুল শঙ্করের!
চন্দন সেনের এই খোলা স্বীকারোক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জনপ্রিয়তা মানেই আর্থিক সুরক্ষা নয়। একজন শিল্পী শুধুমাত্র তাঁর প্রতিভা দিয়ে নয়, মানুষের ভালোবাসা দিয়েই বাঁচতে পারেন—এটাই যেন আজকের মূল বার্তা। তাঁর জীবনের এই অধ্যায় শুধু ব্যক্তিগত যন্ত্রণার কথা বলে না, বরং শিল্পীমনের অন্তর্নিহিত সংগ্রাম ও আত্মমর্যাদার কথাও স্পষ্ট করে দেয়।