১৩ ডিসেম্বরের সেই অভিশপ্ত শনিবারটা যেন আজও ঠিক হজম করতে পারছে না বাংলা। যে সকালটা ফুটবলপ্রেমীদের জন্য স্মৃতির অ্যালবামে জায়গা করে নেওয়ার কথা ছিল, তা ক্রমে বদলে গিয়েছে অস্বস্তি আর হতাশার গল্পে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার মেসির আগমন (Messi Kolkata) ঘিরে যে উচ্ছ্বাস ছিল, তা খুব দ্রুতই ঢেকে যায় বিশৃঙ্খলার চাদরে। মাঠে ঠিক কী ঘটছে, তা দূরের দর্শকদের চোখে পৌঁছনোর আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। উৎসবের বদলে তৈরি হয় এক ধরনের চাপা ক্ষোভ, যা শেষ পর্যন্ত প্রকাশ পায় বিশ্রী আচরণে।
যুবভারতী স্টেডিয়ামের ভেতরের ছবি ছিল আরও বিব্রতকর। মাঠের চারপাশে অকারণ ভিড়, নিয়ম মানার তোয়াক্কা না করা, সঞ্চালকের অনুরোধ উপেক্ষা মিলিয়ে একটা অগোছালো পরিস্থিতি তৈরি হয়। সাধারণ দর্শক, যারা টাকা খরচ করে শুধুমাত্র এক ঝলক মেসিকে দেখার আশায় এসেছিলেন, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হন। সেই বঞ্চনাই ধীরে ধীরে ক্ষোভে রূপ নেয়। গ্যালারি থেকে ছোড়া জলের বোতল, ভাঙচুর, মাঠে নেমে পড়া, কিছুই বাংলার ক্রীড়া সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না, অথচ সেদিন সেটাই বাস্তব হয়ে দাঁড়ায়! এই ঘটনার সঙ্গে অন্য শহরের ছবিটা তুলনা করলে পার্থক্যটা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
হায়দরাবাদ কিংবা মুম্বইয়ে সফরে গিয়ে মেসি হাসিমুখে দর্শকদের সামনে হাজির, মাঠে বল পায়ে কিছু মুহূর্তের জাদু দেখাচ্ছেন এবং কিংবদন্তিদের হাতে তুলে দিচ্ছেন জার্সি! সেখানে শৃঙ্খলা ছিল, দূরত্ব ছিল আর ছিল সম্মান। রাজনীতির অতিরিক্ত উপস্থিতি বা ছবি তোলার হুড়োহুড়ি চোখে পড়েনি। ফলে মেসির অভিজ্ঞতাও ছিল স্বস্তির, দর্শকদের অভিজ্ঞতাও ছিল তৃপ্তির। এই প্রেক্ষাপটেই ঘটনার পর টলিউড ফেডারেশন আয়োজিত ‘ফেডারেশন উৎকর্ষ সম্মান’ অনুষ্ঠানে মুখ খুলেছেন মেগাস্টার দেব।
অভিনেতা, শাসক দলের সাংসদ হিসেবেও স্পষ্ট হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেন, এই ঘটনা বাংলার ভাবমূর্তিতে দাগ ফেলেছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই! অন্য রাজ্য যেখানে এমন একটি আয়োজন সুন্দরভাবে সামলাতে পারল, সেখানে বাংলার ব্যর্থতা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। দেবের বক্তব্যে আবেগ ছিল, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রিত। তিনি মনে করিয়ে দেন, মেসি কেবল ভারত নয়, গোটা বিশ্বের কাছে এক আইকন। তাই এই ব্যর্থতা শুধু কলকাতার নয়, দেশের কাছেও লজ্জার! তবে দেব পুরো কথাটাকে শুধুই নালিশে থামাননি।
আরও পড়ুনঃ শ্রেষ্ঠ ছেলেই যখন বিশ্বাসঘাতক! মিটিলকে ঠকিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে নিল বাবিল! উদাসীনতার আড়ালে লুকিয়ে ছিল নতুন সংসার পাতার পরিকল্পনা! ‘চিরসখা’য় ভাঙল সম্পর্ক ও বিশ্বাস, বাবিলের সিদ্ধান্তে তোলপাড়! মিটিলকে ত্যাগ দিয়ে, কাকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিল সে?
তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে দায়িত্বশীলদের আত্মসমালোচনার প্রয়োজন। কীভাবে এই ক্ষত মেরামত করা যায়, কীভাবে আবার মাথা তুলে দাঁড়ানো যায়, এই প্রশ্নগুলো সামনে আনেন তিনি। স্পষ্টভাবে বলেন, ‘যারা আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের ভাবতে হবে মান-সম্মান কীভাবে অটুট রাখা যায়।’ এই মন্তব্যের মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের বার্তা, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর। শনিবারের ঘটনা বাংলার জন্য অস্বস্তিকর ঠিকই, কিন্তু সেই অস্বস্তিকে যদি সচেতনতার পথে নিয়ে যাওয়া যায় তবেই হয়তো এই অধ্যায়ের সত্যিকারের সমাপ্তি হবে।






