বাংলা সিনেমা জগতে অনেক অভিনেত্রী রয়েছেন, যাদের অনস্ক্রিন চরিত্র দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে। কিন্তু সেই চরিত্রের সঙ্গে বাস্তব জীবন কখনো মেলেনা। এমনই একজন ছিলেন গীতা দে, যিনি কুচুটে শাশুড়ির চরিত্রে পর্দায় সবসময় চমক সৃষ্টি করতেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি ছিলেন স্নেহময়ী এবং মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে অনন্য।

গীতা দে ১৯৩১ সালের ৫ আগস্ট কলকাতার দর্জিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলাতেই তাঁর অভিনয় এবং গানের প্রতি ঝোঁক লক্ষ্য করেছিলেন পরিবার। তাই প্রতিবেশী এক গায়িকার কাছে তালিম নেন তিনি। মাত্র ৬ বছর বয়সে ‘আহুতি’ ছবিতে অভিনয় করেন এবং তার পর ‘দম্পতি’ ও ‘নন্দিতা’ ছবিতে দেখা যায় তাঁকে। ছোটবেলা থেকেই গীতা দে মঞ্চ এবং সিনেমায় অভিনয় করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকেন।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে কলকাতার ব্যবসায়ী অসীমকুমার দে’র সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু সংসারের সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মা মারা যাওয়ার পর ছোট ভাইবোনদের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। স্বামী এই বিষয়টি মানতে পারেননি এবং পরবর্তীতে তিনি গীতা দেকে ছেড়ে দেন। পরিবারের সমর্থন ছাড়া গীতা ছিলেন একা, কিন্তু সংসারের বোঝা বহন করতে গিয়ে তিনি আবার অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নেন।

gita dey

১৯৫১ সালে আবার বাংলা চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। ‘শিল্পী’, ‘লালু ভুলু’, ‘বিয়ের খাতা’ থেকে শুরু করে ‘সাত পাকে বাঁধা’—একাধিক হিট ছবিতে দর্শক তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন। কিংবদন্তি ঋত্বিক ঘটক ও সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’—এই সব সিনেমায় গীতা দে অসাধারণ প্রতিভা দেখিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ বাঙালির কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শ্যামল মিত্রের মেয়ে তথা কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম স্ত্রীর এমন পরিণতি! হঠাৎ বাইপাসের ধারে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার হন মনোবীণা, এখন আশ্রয় মিলেছে ভবঘুরেদের আশ্রমে!

অসাধারণ প্রতিভার পাশাপাশি গীতা ছিলেন অত্যন্ত উদার এবং স্নেহময়ী। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বহু পরিচালক-প্রযোজক কাজ করিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তাঁকে অর্থ প্রদান করেননি। শেষ জীবনে তিনি অভাব এবং একাকীত্বের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন। এমনকি শেষ জীবনে তিনি শাড়ি বিক্রি করে রোজগার করেছিলেন। যিনি সকলের দুঃখে পাশে দাঁড়াতেন, তাঁর শেষ সময়ে কেউ পাশে ছিলেন না , অবশেষে ২০১১ সালে তিনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যান। এই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীর জীবনকাহিনী টলিউডের ইতিহাসে অমলিন হয়ে থাকবে।

You cannot copy content of this page