বাঙালির কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শ্যামল মিত্রের মেয়ে তথা কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম স্ত্রীর এমন পরিণতি! হঠাৎ বাইপাসের ধারে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার হন মনোবীণা, এখন আশ্রয় মিলেছে ভবঘুরেদের আশ্রমে!

প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী শ্যামল মিত্রের (Shyamal Mitra) গান আজও কোটি মানুষের মনে বেঁচে আছে। কিন্তু তাঁর মেয়ে মনোবীণার (Monobina) জীবনের গল্প যেন একেবারেই অন্য রকম। বাইপাসের ধারে অসহায় অবস্থায় তাঁকে একদিন উদ্ধার করে আনা হয় ভবঘুরেদের আশ্রমে। সেই সময়ে তাঁর চেহারায় ক্লান্তি, চোখে ফ্যালফ্যাল চাউনি আর বিবস্ত্র অবস্থা দেখে অনেকেই স্তব্ধ হয়েছিলেন। যিনি একসময় শিল্পী-পরিবারের অংশ ছিলেন, তাঁর ঠিকানা আজ একটি আশ্রম!

মনোবীণার স্মৃতির ভাঁজে এখনো রয়ে গেছে বাবার সুর আর মায়ের সংসারী স্বভাব। তিনি একবার বলেছিলেন, “আমি কখনও গান শিখিনি। আমার ভাই বাপি আর ভুট্টো শিখত। আমি একটু আমার মায়ের মতোই ছিলাম।” বাবার সুরের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া আর মায়ের ঘরোয়া জীবনের ছবি তিনি প্রায়ই মনে করেন। একই সঙ্গে পোশাকের প্রসঙ্গ উঠতেই জানান, জীবনে কখনও সালোয়ার-কামিজ পরেননি। কিন্তু আশ্রমে এসে সেটাই তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী।

অতীত আর বর্তমানের এই অদ্ভুত ফারাক যেন ক্রমশই গুলিয়ে ফেলছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনও খুব উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে তাঁর। অভিনেতা কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একসময় বিয়ে হয়েছিল তাঁর। তাঁদের ছেলে সুস্নাত আজ বড় হয়েছে, কিন্তু মায়ের সঙ্গে দূরত্ব এতটাই বেড়ে গেছে যে আর যোগাযোগ রাখতে চায় না। মনোবীণা এখনও ভাবেন, ছেলে ছোট, পড়াশোনা করছে, হয়তো যে কোনওদিন মায়ের টানে ফিরে আসবে।

বাস্তবের সঙ্গে এই কল্পনার লুকোচুরি তাঁর মানসিক অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলেছে। পরিবার থেকেও তেমন ভরসা মেলেনি। কৌশিক খোরপোশ পাঠালেও মনোবীণার প্রতি টান নেই বললেই চলে। ভাই সৈকত মিত্রও দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনিও স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই অবস্থায় কাউকে বাড়িতে রাখা সম্ভব নয়। ফলে মনোবীণার ঠিকানা স্থায়ী হয়ে গেছে আশ্রমেই। মাঝে মাঝে তিনি অনুরোধ করেন, যেন বাড়িতে খবর দেওয়া হয়, কেউ এসে তাঁকে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ ‘অভিনয় ছাড়া কিছুই পারিনি, রাজনীতি আমার জন্য ছিলনা’ রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে উল্টোপাল্টা মন্তব্য করে খুইয়েছিলেন নিজের সম্মান! অন্তিম সময়ে স্ত্রীর কাছে আফসোস করেন তাপস পাল

কিন্তু সেই অপেক্ষা আজও অপূর্ণই রয়ে গেছে। তবুও মনোবীণা বাবার স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, একদিন নিশ্চয়ই সব ঠিক হবে, ছেলে আসবে, পরিবার ফিরিয়ে নেবে। হয়তো বাস্তবে আর তা সম্ভব নয়, কিন্তু এই ভরসাতেই তিনি দিন কাটান। শ্যামল মিত্রকে মানুষ ভোলেনি, কিন্তু তাঁর মেয়ের করুণ পরিণতি যেন আমাদের সমাজকে আরও একবার প্রশ্ন ছুড়ে দেয়—কেউ এতটা একা হয়ে গেলে, আমরা আসলে কতটা পাশে দাঁড়াই?