প্রাক্তন অভিনেতা এবং রাজনীতিবিদ জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Joy Banarjee Death) চলে যাওয়া যেন এক মুহূর্তে তাঁর স্ত্রীর পুরো পৃথিবীকে উলটে দিয়েছে। এমনকি পরিবার থেকে শুরু করে শুভাকাঙ্ক্ষীরা, কেউই এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তিনি আর নেই। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সবকিছু বদলে গেল। যে মানুষ জীবনকে এত ভালোবাসতেন, যাঁর হাসি-কথায় চারপাশ ভরে উঠত, তাঁর অনুপস্থিতি আজ যেন এক অদ্ভুত শূন্যতার জন্ম দিয়েছে। বিরাট বাড়ি ভরে আছে স্মৃতিতে, অথচ সেই মানুষের কণ্ঠস্বর নেই। রয়ে গেলেন শুধু অসুস্থ মা আর স্মৃতির ভারে ভেঙে পড়া স্ত্রী।
এই শূন্যতাকে শব্দে প্রকাশ করাও কঠিন। হাসপাতালে ভর্তি করার দিন থেকে সবারই আশা ছিল জয় আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে ফিরবেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছিলেন চিকিৎসকেরা, এমনকি পেসমেকার বসানোর চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের খেলা অন্যরকম ছিল। মাত্র ৬২ বছর বয়সেই থেমে গেল এক তাঁর জীবনের গতি। এই শেষ লড়াইয়ে তাঁর পাশে ছিলেন স্ত্রী অঙ্কিতা, যিনি বয়সে অনেকটাই ছোট, কিন্তু সম্পর্কে ছিলেন সমান দৃঢ়। তিনি মনে করিয়ে দেন, জয় সবসময় ঢাল হয়ে দাঁড়াতেন পরিবারকে রক্ষা করতে।
সব বিপদের মুহূর্তে যেভাবে আগলে রেখেছিলেন সবাইকে, তাঁর মৃত্যুর পরে সেই ভরসাটা যেন এক নিমেষে হারিয়ে গেল। অঙ্কিতার জীবনের প্রথম বিয়ে হলেও জয়ের তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী। অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে জয় একদম ভেঙে পড়েছিলেন। সেই সময়ে অঙ্কিতা এগিয়ে এসে পাশে দাঁড়ান। সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন সম্পর্কের পথচলা। ২০১৯ সালে তাদের বিয়ে, আর তারপর ছয় বছরের সংসার। তিনি জানান, অনন্যার সঙ্গে জয়ের সম্পর্ক কখনও পুরোপুরি ছিন্ন হয়নি। মাঝেমধ্যে কথা হত, খোঁজখবর নিতেন। এমনকি কখনও তিনজন একসঙ্গে গল্পও করেছেন।
এই খোলামেলা সম্পর্কের জন্যই হয়তো কোনও অস্বস্তি জায়গা করে নেয়নি। আর মৃত্যুর পরে অনন্যা যেভাবে এগিয়ে এসে পাশে দাঁড়িয়েছেন, অঙ্কিতা সেই সহমর্মিতা কোনওদিন ভুলবেন না বলেই জানিয়েছেন। জীবনের নানা দায়িত্বের মধ্যে জয়ই ছিলেন অঙ্কিতার প্রধান ভরসা। স্বামী, সংসার, অসুস্থ শাশুড়ি আর প্রয়াত শ্বশুরের গোয়েন্দা সংস্থার কাজ— সবকিছুই তাঁর কাঁধে এসে পড়েছিল। এর মাঝেও জয় ছিলেন সাহস জোগানোর মানুষ। মঙ্গলবার হঠাৎ করেই সবকিছু বদলে গেল।
দায়িত্ব রয়ে গেল, সংসার রয়ে গেল, কিন্তু সঙ্গী রইল না। অঙ্কিতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দ্বিতীয় বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে কেউ কেউ কথা তুললেও, তাঁর কাছে তা অকল্পনীয়। এত তাড়াতাড়ি নতুন করে সম্পর্কের কথা ভাবা অসম্ভব। আজ তাঁর পাশে আছে শুধু জয়ের অগণিত স্মৃতি। প্রতিটি মুহূর্তে সেই স্মৃতিই তাঁকে ঘিরে রাখছে। জয় ছিলেন স্পষ্টভাষী, কখনও কখনও তাঁর কথা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। কিন্তু আসলেই ছিলেন একেবারে মানবিক। সাধারণ মানুষের ভাল করার জন্য সবসময় ব্যস্ত থেকেছেন।