সারাজীবন ‘কুচুটে মহিলা’র রোলেই অভিনয় করে গেলেন দুর্দান্ত অভিনেত্রী গীতা দে, টলিউড থেকে পেলেন না কোন সম্মান!চলে গেছিলেন অনেক দুঃখ নিয়ে
আমরা তাকে চিনি সিনেমার কুচুটে মহিলা হিসাবে।অধিকাংশ সিনেমাতেই তাকে আমরা নেগেটিভ চরিত্রে দেখেছি।কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন একেবারেই দয়ার সাগর। সেরকমটাই বলেন তার আশপাশের মানুষরা।তিনি বলেন আমাদের সকলের প্রিয় অভিনেত্রী গীতা দে যিনি টলিউড থেকে কোনো যোগ্য সম্মান পাননি শেষ বেলায়।
সিনেমাতে তাঁর চরিত্র নেগেটিভ হলেও, গুরুত্ব ছিল অনেক। এমনকি টলিউডের আরও এক জনপ্রিয় বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ভানু বন্দোপাধ্যায় নিজের আত্মজীবনীতে তাঁর নাম উল্লেখ করে লিখেছেন, “গীতা দে ভীষণ শক্তিশালী অভিনেত্রী। ও ভালো গানও জানে। ওর অভিনয় জীবন শুরু শ্রীরঙ্গমে, খুব ছোটবেলায়। তারপরে শিশির ভাদুড়ির কাছে নাট্য শিক্ষা ও একই সঙ্গে নাটকে অভিনয় করা। সিনেমাতেও ক্যারেক্টার অ্যাক্ট্রেস হিসেবে দুর্দান্ত অভিনয় করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ডাইনি’।
বাবা অনাদিবন্ধু মিত্র মেয়ের গান ও অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক দেখে প্রতিবেশী গায়িকা রাধারানী দেবীর কাছে তালিম নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। জীবনে প্রথমবার নাচ, গান, অভিনয়ের শিক্ষা সেই ব্যক্তিত্বের কাছেই। মাত্র ৬ বছর বয়স থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত টানা সিনেমায় ও থিয়েটারে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে অসীমকুমার দে’র সঙ্গে বিয়ে হয় গীতা দের। বিয়ের পাঁচ বছর বাদে তিনি অভিনয় জগতে ফিরে আসেন আবার।
সেই সময়ে প্রখ্যাত পরিচালক শিশিরকুমার ভাদুড়ির সংস্পর্শে আসেন তিনি। জ্ঞানেশ মুখার্জি, শম্ভু মিত্র, কালী সরকার, কানু ব্যানার্জি, তুলসী লাহিড়ী ও দিলীপ রায় প্রমুখ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে করেছেন গ্রুপ থিয়েটারে অভিনয়। এমনকি ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’; সত্যজিৎ রায়ের ‘তিন কন্যা’, ‘সমাপ্তি’ এবং দেবকীকুমার বসুর ‘সাগর সঙ্গমে’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছেন সেই সময়কার শক্তিশালী অভিনেত্রী গীতা দে।
তাঁর ছবির সংখ্যা অসংখ্য। ‘নৌকাডুবি’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘মাল্যদান’, অরবিন্দ মুখার্জির ‘নিশিপদ্ম’, ‘দুই ভাই’, ‘মৌচাক’ তপন সিংহের ‘হাটেবাজারে’, ‘জতুগৃহ’র মতো আরও নানা হিট ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রতিভা দেখা গিয়েছে। নানা চরিত্রে নানাভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। তবে পর্দায় তিনি যতই ভিলেন হন না কেন, বাস্তবে অত্যন্ত স্নেহশীল, সংবেদনশীল একজন মানুষ ছিলেন।
রুপোলি পর্দায় কুচুটে, দজ্জাল, রাগী, মুখরা মনোভাবের মানুষ হিসেবে তাঁকে দেখা গেলেও, ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন একদমই উল্টো। তবে তাঁর এই ধরনের অভিনয় করার ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা ও চিত্র পরিচালক লরেন্স অলিভার। এমনিতেই তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ ছিলেন টলিপাড়ার সকল পরিচালকেরা। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অবদান মনে রাখার মত।