টলিউড ইন্ডাস্ট্রির (Tollywood) সংকট নিয়ে নানা সময়েই প্রশ্ন উঠেছে, তবে এবার সরাসরি আঙুল উঠল টিকিটের মূল্যনীতির দিকে। দীর্ঘদিন ধরে দর্শকের অভিযোগ, সিনেমা হলে ঢুকলেই অতিরিক্ত খরচ যেন অস্বস্তির জায়গা তৈরি করছে। বিশেষত মাল্টিপ্লেক্স (Multiplex Culture) সংস্কৃতিতে সিনেমার টিকিট যেমন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাবারের অস্বাভাবিক দামও। দর্শকের অভিজ্ঞতা যেন ক্রমশ চাপের হয়ে উঠছে, ফলে সিনেমা হলে আগ্রহ কমছে বলেই মনে করছেন ইন্ডাস্ট্রির অনেকে।
সম্প্রতি জনপ্রিয় অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee) সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “আজকাল সিনেমা দেখতে গেলেই দর্শককে পপকর্ন কিনতে গুনতে হচ্ছে অস্বাভাবিক দাম। অথচ সেই পপকর্নের প্রকৃত মূল্য বাজারে একেবারেই তুচ্ছ।” তাঁর প্রশ্ন, “সিনেমা উপভোগ করতে গিয়ে কেন দর্শককে এমন বাড়তি চাপ নিতে হবে?” বরং এক টিকিটের নির্দিষ্ট দাম ধার্য থাকলেই সব শ্রেণির মানুষ সমানভাবে সিনেমা হলে ফিরতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘদিন ধরেই টিকিটের দাম একরকম নিয়মে বেঁধে দেওয়া আছে। সেখানকার দর্শক তাই এক স্থিরতার মধ্যে সিনেমা দেখতে পান। কিন্তু বাংলায় বিভিন্ন হলে বিভিন্ন হারে টিকিট বিক্রি হওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এর ফলে একদিকে প্রযোজক-পরিচালকের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষও ধীরে ধীরে হল থেকে সরে যাচ্ছেন। অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে বাংলা বিনোদন জগতে।”
এই পরিস্থিতিতে সরকারী হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি বলে তিনি মনে করেন। শিল্পীর বক্তব্যে উঠে এসেছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক— টলিউডের অনেক পরিচিত মুখ এখন রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। বিশেষ করে দেব ও রাজ চক্রবর্তী কেবল জনপ্রিয় তারকা নন, তাঁরা শাসকদলের সাংসদও। ফলে তাঁদের হাতে সুযোগ আছে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার। শাশ্বতর মতে, দর্শকের পক্ষে তারা যদি কিছু উদ্যোগ নেন, তাহলে টলিউডের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে এবং সিনেমা হলে ভিড় ফেরানো সহজ হবে।
আরও পড়ুনঃ “আজ একটা নতুন দায়িত্ব কাঁধে চাপলো, ডিসেম্বরেই পাঁচ লাখ লোককে চাকরি দেবো!” “মেয়েদের স্বাবলম্বী করব, আর বেকারত্ব থাকবে না!”— বিবাহবিচ্ছেদের পরেই সমাজ সংস্কারের কাজে সুস্মিতা! ব্যক্তিগত ভাঙনের মাঝেই নতুন ব্যবসায়িক যাত্রায় প্রশংসা কুড়োলেন সবার!
সবশেষে বলা যায়, টিকিটের অনিয়ন্ত্রিত দাম আর খাবারের বাড়তি খরচ শুধু সিনেমাপ্রেমীদের হতাশ করছে না, গোটা ইন্ডাস্ট্রির স্থায়িত্বকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের কার্যকর নীতি, জনপ্রিয় তারকাদের হস্তক্ষেপ আর ইন্ডাস্ট্রির ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা— এই তিনের সমন্বয়েই হয়তো নতুন করে বাংলা সিনেমাকে দর্শকের কাছে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এখন দেখার বিষয়, অভিযোগ থেকে শুরু হওয়া এই আলোচনাই কতটা বাস্তব পদক্ষেপে রূপ নেয়।