টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ পরিচিত নাম, কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে আছে দীর্ঘ সংগ্রামের গল্প। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে একজন অভিনেত্রী হওয়ার। প্রথমে তিনি গান শিখেছিলেন, তারপর ধীরে ধীরে নাচ শেখেন। অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এতটাই প্রবল ছিল যে, জীবনের প্রতিটি ধাপে তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন অভিনয়ের জন্যই। তবে এই যাত্রা কখনই সহজ ছিল না। পারিবারিকভাবে শিল্পচর্চার পরিবেশ থাকলেও নিজের জায়গা তৈরি করতে তাঁকে লড়তে হয়েছে অক্লান্তভাবে।
কনীনিকার জীবনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে যখন তিনি তাঁর মাকে হারান। অভিনেত্রীর কথায়, “মাকে হারানোর পর সেই জায়গার রিপ্লেসমেন্ট হয় না।” মায়ের মৃত্যু তাঁর জীবনে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করে, যা তিনি আজও পূরণ করতে পারেননি। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, এখন যেন কোনরকমে বেঁচে আছেন — বেঁচে আছেন ‘একটুখানি’ মাত্র। কনীনিকা মনে করেন, জীবন তাঁকে একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, কিন্তু তিনি এখনো লড়ে যাচ্ছেন। তাঁর ভাষায়, “আমার জীবন নিয়ে যদি কেউ সিনেমা করে, আমি হয়তো সেটা দেখতেও পারব না, কারণ আমার জীবনটা এতটাই কষ্টে ভরা।”
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টলিউডে যাত্রা শুরুটা একেবারেই সহজ ছিল না। নাচ ও গানের পর অভিনয়ে পা রেখেই তিনি বুঝেছিলেন, এখানে টিকে থাকা মানে প্রতিনিয়ত নিজের জায়গা প্রমাণ করা। অনেকেই তাঁকে কাজের সুযোগ দিতে গিয়ে অদ্ভুত শর্ত জুড়ে দিতেন, কিন্তু তিনি কোনদিনই সেই কম্প্রোমাইজ করেননি। অভিনেত্রীর ভাষায়, “আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে রেপ হয় না, কিন্তু শরীর দিয়েও সুযোগ আসে।” এক প্রযোজক একবার তাঁকে বলেছিলেন, ৫০ বছর বয়সে তাঁকে “হাত কামড়াতে হবে” — কারণ তিনি তখন তাঁর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কনীনিকা জানিয়েছেন, “আমি প্রায় ৫০-এর কাছাকাছি, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকে হাত কামড়াতে হয়নি, কারণ আমি নিজের সম্মানটা বিকিয়ে দিইনি।”
বর্তমান যুগে যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া জীবনের অঙ্গ, সেখানে কনীনিকার দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে আলাদা। তিনি মনে করেন, “যখন আমি ছোট ছিলাম তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। এখনকার দিনে সবাই ভাবে ফেমাস হলেই সব কিছু পাওয়া যায়, কিন্তু কয়েক বছর আগে এটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।” অভিনেত্রীর মতে, সোশ্যাল মিডিয়াকে জীবনের সবকিছু ভেবে নেওয়া একপ্রকার মানসিক অসুস্থতা। ট্রোলিং বা সমালোচনাকে তিনি কখনো নেতিবাচকভাবে নেন না, বরং পজেটিভ সাইন হিসেবে দেখেন। তাঁর বিশ্বাস, যারা শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় খুঁজতে চায়, তাদের আসলে সাহায্যের প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ “ওরা আমাকে সুপারহিরো মনে করে…ভাবনা-চিন্তার পার্থক্য আছে, তবে একসঙ্গেই আছি!”, চলতি বছরের শুরুতেই বিচ্ছেদ নিয়ে চরম নাটকীয়তা পৃথা-সুদীপের, আবার একসঙ্গে থাকতে শুরু করেছেন! অজুহাত দিচ্ছেন সন্তানদের নামে? মুখ খুললেন সুদীপ!
নিজের জীবনের নানা বাধা পেরিয়ে কনীনিকা আজ এক অনুপ্রেরণার নাম। তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রতিভা ও অধ্যবসায়ই মানুষকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেয়। প্রযোজক বা পরিচালকের কাছে নিজেকে বিকিয়ে না দিয়ে তিনি নিজের সম্মান বাঁচিয়ে রেখেছেন। টলিউডের অন্ধকার দিক, মানসিক কষ্ট, ব্যক্তিগত শোক— সবকিছুর মাঝেও কনীনিকা আজও টিকে আছেন নিজের যোগ্যতায়। তাঁর কথায়, “সম্মানটা যদি একবার হারিয়ে যায়, তা আর ফিরে আসে না।” আর এই আত্মসম্মানের জোরেই আজও তিনি অনেকের কাছে প্রেরণার প্রতীক।