“মা’লটাকে গাড়িতে তোল…” সংলাপে আজও বাঙালির মনে তাজা! নায়ক নয়, খ’লনায়ক হয়েই দর্শকের হৃদয়ে অমর সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়! মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ইতি, হতে চাননি অভিনেতা— জানেন তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায়ের কথা?

টলিউডের খলনায়কদের কথা বলতে শুরু করলে যাঁর নাম প্রথমেই উঠে আসে, তিনি অভিনেতা ‘সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়’ (Soumitra Bannerjee)। নবাব ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপ, “মা’লটাকে গাড়িতে তোল…”— আজও দর্শকদের মুখে মুখে ফেরে। আশির দশকের বাংলা সিনেমার ভিলেন চরিত্রগুলিকে যেন আরও বাস্তব করে তুলেছিলেন তিনি। নায়কের বা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় না করেও, শুধু অভিনয়ের জোরে দর্শকদের মনে গেঁথে থাকার কৃতিত্ব খুব কম অভিনেতার আছে, সৌমিত্র তাঁদের মধ্যে একজন।

১৯৫৪ সালে হুগলির জমিদার পরিবারে জন্ম তাঁর। দশের গণ্ডি পার করতেই পা রাখেন চলচ্চিত্র জগতে। সুভা এবং দেবতার গ্রাস ছবিতে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আশির দশকের শুরুর দিকে যখন বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন ধারা তৈরি হচ্ছিল, তখনই মিঠুন চক্রবর্তী ও দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে ‘ত্রয়ী’ ছবিতে তিনি বড় পর্দায় পাকাপাকি জায়গা করে নেন। ছবিটি বক্স অফিসে দারুণ সফল হয়, আর সেই সাফল্যের সঙ্গেই সৌমিত্রর নামও আলোচনায় উঠে আসে। যদিও তাঁর ঝোঁক ছিল গানের দিকে।

কিশোর কুমারের গান গাইতে নাকি ছোট থেকেই তিনি ছিলেন পারদর্শী। পাড়ার অনুষ্ঠানে মঞ্চ কাঁপানো সেই গায়কই পরে হয়ে ওঠেন টলিউডের ভয়ঙ্কর খলনায়ক! তাঁর অভিনয় জীবনের অনেক খলচরিত্রই দর্শকদের কাছে আজও প্রিয়। তাঁর নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের দক্ষতা আজ পর্যন্ত খুব কম অভিনেতা টেক্কা দিতে পেরেছে। টলিউডের স্বর্ণযুগে একের পর এক ছবিতে যেন তাঁকে ভিলেনের ভূমিকায় না দেখতে পেলে দর্শকরা ক্ষোভ ফেটে পড়তেন। হাতে গুনে শেষ করা যাবে না, প্রায় দেড়শো ছবিতে তিনি এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

একই রকমের হলেও প্রতিটি চরিত্রেই তাঁর উপস্থিতি আলাদা করে নজর কাড়ত। দর্শকরা যেমন তাঁকে ঘৃণা করতেন, তেমনই প্রশংসাও করতেন অভিনয়ের জন্য। জীবনের মঞ্চে যেমন তিনি কঠিন চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তেমনই ব্যক্তিগত জীবনে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মুখোমুখি হয়েছেন। সৌমিত্রের কেরিয়ার যতটা আলোয় ভরা ছিল, ব্যক্তিগত জীবন ছিল ততটাই অন্ধকার। অভিনয়ের শুরুর দিকেই সংসার গড়ে তুললেও, সেই জীবন ততটা স্থায়ী হয়নি।

সৌমিত্রের অতিরিক্ত মদ্যপান আর অশান্তির কারণে, অভিনেত্রী রীতা কয়রালের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ভেঙে যায়। পরবর্তীতে অন্য সম্পর্কে জড়ালেও আর টেকেনি। তাঁর শেষ ছবি ছিল ‘খেলাঘর।’ অবশেষে, দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২০০০ সালের ৮ জানুয়ারি মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ কয়েকদিন হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় লড়াই করেছিলেন জীবনের জন্য। তাঁর ছোট অথচ উজ্জ্বল এই কর্মজীবন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অমলিন হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুনঃ “আমার মতো আন্তর্জাতিক শিল্পী বাংলায় অবহেলিত!” “ইন্ডাস্ট্রিতে ‘ইয়েস ম্যান’ না হলে কাজ মেলে না, এখানে লবিই সব”—অতুলপ্রসাদ-দ্বিজেন্দ্রগীতি গেয়ে বিশ্বজোড়া খ্যাতি, তবুও বাংলার মঞ্চে ব্রাত্য ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়! এবার ওভাররেটেড শিল্পীদের দাপট নিয়েও মুখ খুললেন তিনি!

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।

You cannot copy content of this page