নতুনদের সঙ্গে একেবারে কথা বলতেন না সুচিত্রা সেন! উত্তম কুমার ছিলেন একেবারে বিপরীত! ‘দাদা’র অজানা তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন লিলি চক্রবর্তী

বাংলা অভিনয় জগতের একটি অতি জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রী তারা দুজনেরই। উনিশের দশক থেকেই আজও তাদের অভিনয় বারবার মুগ্ধ করেছে বাংলা সিনেমার দর্শকদের। তাদের কালজয়ী অভিনয় যেন জীবিত করে তুলেছে তাদের অভিনীত প্রতিটি চরিত্রকে। সময়ের কালস্রোতে মলিন হয়নি তাদের জনপ্রিয়তা বরং আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বাংলার মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) এবং আরেকজন জনপ্রিয় বর্ষীয়ান অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী (Lily Chakraborty)।

বিপাশা থেকে ভোলা ময়রা। অভিনয় জীবনের শুরু থেকেই অভিনেত্রী কাজ করে গেছেন মহানায়কের সঙ্গে। এবার মহানায়কের প্রসঙ্গেই কলম ধরলেন অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী, জানালেন নানা অজানা কথা। অভিনেত্রী জানিয়েছেন “আমি যখন বিপাশা ছবিতে কাজ শুরু করেছিলাম তখন ইন্ডাস্ট্রি বলতেই উত্তম কুমার। যদিও ওনার সঙ্গে আমার প্রথম সিনেমায় কোন দৃশ্য ছিলনা। ওনাকে সেটে যেতে আসতে দেখতাম। কিন্তু কথা বলার সাহস হয়নি কখনও। এত বড় অভিনেতা আমার সঙ্গে কথা করবেন কিনা।”

lily chakrabarty

অভিনেত্রী এও জানান “তারপর দেয়া নেয়া ছবিতে কাজ করেছি ওনার সঙ্গে। তখন বুঝেছিলাম উনি একেবারেই আলাদা। নতুন অভিনেতা যাতে ভয় না পাই তাই সবটা সহজ করে বুঝিয়ে দিতেন উনি। সেখানে আমি তরুণ কুমারের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম তখন থেকেই আমায় বৌঠান বলে ডাকতেন। প্রথম ছবির সঙ্গে এই সিনেমার অভিজ্ঞতার কোন কথাই হয়না। আসলে সেই ছবিতে মিসেস সেন ছিলেন। আমি তার বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। উনি ক্যামেরার সামনে অন্যরকম ছিলেন আর বাস্তব জীবনে একদম আলাদা। নতুনদের সঙ্গে কথা বলতেন না। কিন্তু দাদা একেবারে আলাদা। একটি কথা বলতে বলতেই হটাৎ খেয়াল করি আমরা সিনেমার সংলাপ বলছি। এইভাবে গল্পের ছলে ডায়লগ বলা ওনার থেকেই শিখেছি।”

মহানায়ক সর্ম্পকে অভিনেত্রী জানিয়েছেন “গেটের সামনেই গাড়ি থেকে নেমে যেতেন উনি। সমস্ত টেকনিশিয়ানদের খোঁজ খবর নিতেন। অনেককে সাহায্যও করেছেন কিন্তু কিছু জানতে দিতেন না। তাদেরও বলা থাকত যে বাইরের কেউ যেন না জানে। ভোলা ময়রার সময় ওনার খাস লোককে দিয়ে বলে পাঠিয়েছিলেন আমায় খবর দিতে। কারণ উনি আমায় আগে একটি সিনেমায় নেওয়ার কথা ছিল কিন্তু নানা কারণে নিতে পারেননি। সেইসময় একদিন শুটিংয়ে বেনুদি বলেছিল পান খাওয়ার কথাও। আমিও খেয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু বেশি জর্দার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি। দাদা বলেছিলেন সহ্য না হলে খাও কেন। যদিও বকাবকি করেননি। পরে শুনেছিলাম উনি বলে গেছিলেন আমি ঘুম থেকে উঠলে খাওয়ায় গরম করে দিতে। আর আমার দৃশ্যগুলি পড়ে শুট করাতে।”

আরও পড়ুন: পর্ণার চালে কুপোকাত নবনীতা! নিজে এসে স্বসম্মানে বর্ষাকে নিয়ে গেলেন বাড়িতে! কী হবে এবার?

অভিনেত্রী মহানায়কের উত্তম কুমারের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের স্মৃতিচারন করে বলেছেন “আমরা মাঝেমধ্যেই দাদার বাড়ি গিয়ে বেনুদির রান্না খেয়ে আসতাম। বুড়োদার বিয়ের দিনও নিমন্ত্রণ করেছিলেন। খুব মজা হয়েছিল। দেয়া নেয়া পর টেকনিশিয়ান ২তে শুটিং করছিলেন তখন উনি এসে বলেছিলেন বৌঠান কোন রেশনের চাল খাওয়া হয় একই তো রয়ে গেলে। আমিও বলেছিলাম এই কথাটা তো আমিও আপনাকে বলতে পারি। শেষের দিকটাও স্পষ্ট মনে আছে। আমরা হার মানিনির শুটিং করছিলাম। আমি ওনার বিপরীতে ছিলাম। আমাদের আউট ডোরে যাওয়ার কথা ছিল ১৯৮০ সালে ২৪ জুলাই আমার এক বন্ধু আমায় খবরটি দিয়েছিল আমি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু পরে সংবাদপত্র দেখেছিলাম। আমি সারাদিন ওখানেই ছিলাম। এখনও ভাবি দাদা থাকলে কত ভালো হত। হয়তো বয়সের কারণে অভিনয় করতেন না কিন্তু পরিচালক হিসেবেও দক্ষ ছিলেন।” মহানায়ক উত্তম কুমার স্মৃতি যে এখনও তার কাছে টাটকা সেই কথাও জানিয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী।