বাংলা বিনোদন জগতের একজন মানুষ তিনি। নিজের নৃত্যকলা এবং অভিনয়ে তিনি বারবার মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) আগন্তুক হোক বা মিঠুন চক্রবর্তীর মৃগয়া। স্বদক্ষতায় তিনি ফুটিয়ে উলেছেন প্রতিটি সিনেমা। তবে এছাড়াও মাছের ঝোল, দহন, জাতিস্মর, প্রজাপতি, পালন, শিবপুর, শেষের গল্প, প্রধান, বিজয়ার পরে সহ একাধিক সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty) , সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee) , পরাগ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এছাড়াও তাকে দেখা গেছিল অমিতাভ বচ্চনের সিনেমা পিঙ্কে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে।
যদিও অভিনেত্রী মানেই তাকে পড়তে হবে মর্ডান পোশাক, সেই সংজ্ঞাকেই বারবার ভুল প্রমাণিত করেছেন তিনি। তিনি অনেকবারই জানিয়েছেন শাড়ি পড়তেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। আমরা কথা বলছে জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং নৃত্যশিল্পী মমতা শংকরের। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতায় নারী এবং প্রকৃতির একটি মেলবন্ধন উৎযাপন করা হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার শাড়ি অলংকার প্রদর্শনীতে। সেই অনুষ্ঠানেই কবিতা পাঠ করেছিলেন কবি জয় গোস্বামী। পুরনো ধারাবাহিক আভিজাত্যের প্রতীক নাকি বর্তমানের নতুনত্ব ছোঁয়া। বাস্তবে ফ্যাশনের সংজ্ঞা কি? জানিয়েছিলেন ব্রততী বন্দোপাধ্যায়, মমতা শংকর এবং বিবি রাসেল।
অনুষ্ঠান টির নাম শৈলী। যেখানে অদ্ভুত সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে হাতে বোনা শাড়ি এবং অলংকারের মেলবন্ধন যা পরিপূর্ণ করে নারীত্বকে। যা করেছেন গ্রাম বাংলার শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই “শৈলীর” কর্নধার শিক্ষক শৈবাল বসু তার বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন “আমাদের বসন এবং ভূষণে তুলে ধরা হয়েছে প্রকৃতিকে। আটপৌরে হলেও সেটি অনবদ্য ভাব ছিল। এখন যদিও আমরা তার থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছি, অতি মাত্রায় নাগরিক হয়েছি। তবে বাঙালি বাঙালি মানেই বাঙালি হিন্দু নয়। যেমন তাবিজ। পথের পাঁচালীর সর্বজয়াও গলায় তাবিজ পড়ত। যেমন বাঙালি মুসলমান ঘরণীরাও পড়েন।”
বিষয়ে ব্রততী বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন ফ্যাশনের একটি অপরিহার্য দিক হল সাহিত্য। রবি ঠাকুরের শেষের কবিতার কথাকে তুলে ধরে তিনি বলেছেন “ফ্যাশনটা মুখোশ, স্টাইলটা মুখশ্রী।” তিনি জানিয়েছেন তিনি মনে করেছেন এই শাড়ি গয়নাতেই আছে মাটির গন্ধ। সাজ ও সাহিত্যের মেলবন্ধন গড়ে তুলে এটি। প্রজন্মের মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে তোলে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্না বিবি রাসেল তুলে ধরেছেন কিভাবে একই শাড়িকে পৃথকভাবে তুলে ধরা যায়। তিনি বলেছেন “মমদি যেই শাড়িটা পড়েছে, আমিও একই শাড়ি পড়েছি খালি ওয়েস্ট কোর্ট পড়েছি বেশ স্টাইল আলাদা হয়ে গেছে। এভাবেই একই পোশাকে আলাদা আলাদাভাবে পরেই স্টাইল করা যায়।”
নৃত্যশিল্পী অভিনেত্রী মমতা শংকর বলেছেন “পুরনো জিনিসের একটি আভিজাত্য আছে। সেটাকেই ফিরিয়ে আনা দরকার।” বর্তমান স্টাইল নিয়ে তিনি বলেছেন “আজকালকার মেয়েটা যেইভাবে শাড়ি পরে তাতে আঁচল ঠিক থাকে না। ক্ষমা করবেন এইকথা বলছি। রাস্তার মেয়েরা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাড়িয়ে থাকা মেয়েরা যেইভাবে শাড়ি পরে ওইভাবেই আজকালকার মেয়েরা শাড়ি পড়ে। তারা তো পেশার কারণে পুরুষের আকর্ষণ করার জন্য ওইভাবে শাড়ি পড়ে। কিন্তু বাকি মেয়েরা বিনা কারণেই কেন সেটাকে অনুসরণ করছে! মেয়েরা ওইভাবে শাড়ি পড়বে তারপর পুরুষরা কিছু বললেই রেগে বলবে তাদের সম্মান করা হচ্ছে না। মেয়েরা সেই শালীনতা বজায় রাখলে তো পুরুষরা তাদের সম্মান করবে।”
তিনি আরও যোগ করে বলেন “আমাদের নিজেদেরই যদি সেই মর্যাদা না থাকে তাহলে কিভাবে পুরুষরা আমাদের সমমনা করবে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। কিন্তু সম্মান অসম্মান তো আর পোশাকের ওপর নির্ভর করে না। প্রথমবার দেখেই ধারণা করা যায় আমি যদি ভালো মেয়ে হব তাহলে ওইভাবে শাড়ি পড়বো কেন নিজেকে ওইভাবে দেখিয়ে বেড়াবো কেন?” অভিনেত্রীর বিস্ফোরক মন্তব্য সারা ফেলেছে নেট দুনিয়ায়। শুরু হয়েছে এই বিষয়ে চর্চা। আপনাদের কি মত অভিনেত্রী মমতা শংকর যা বলেছেন সেটা কি সঠিক?